
সুমন গঙ্গোপাধ্যায়ঃ হাতে আর কয়েকমাস। আরো ভালো করে বলতে গেলে কার্যত দরজায় কড়া নাড়া দিচ্ছে নির্বাচন। গতবারের ১৮ আসন বাড়িয়ে এবার ৩৫ এর লক্ষমাত্রা বিজেপির। তাও আবার যে সে নয়, খোদ অমিত শাহ রাজ্যে এসে এই টার্গেট দলীয় নেতা কর্মীদের দিয়ে গিয়েছেন। তাই এক কথায় নাওয়া-খাওয়া ভুলে ৩৫ আসনে ‘মোদীকে পৌঁছে দিতে’ তৈরী বিজেপি নেতা- কর্মীরা। কিন্তু সূত্র বলছে সমস্যা অন্যত্র। নেতা তো টার্গেট দিয়ে দিল্লি চলে গিয়েছেন। কিন্তু বঙ্গ বিজেপি? আছে সেই তিমিরেই। অর্থাৎ দলের অন্দরে প্রতিদিন বাড়ছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
হাতে গোনা কয়েকটি আসন ছাড়া বাকি একাধিক আসনে দলের ‘অফিসিয়াল’ প্রার্থীকে হারাতে তৈরি একাধিক গোষ্ঠী। আশঙ্কা যতো নির্বাচন এগোবে ততই আরও প্রকট হবেন ‘ তিনি’, অর্থাৎ গোষ্ঠীকোন্দল।
যার শুরু সেই পাহাড় থেকে! ২০২৩ সালে আগষ্ট মাস নাগাদ খোদ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে পৃথক রাজ্যের দাবি তুলে আন্দোলন শুরু করেন কার্শিয়াং এর বিজেপি বিধায়ক বিপি শর্মা। তবে এখানেই শেষ নয়। সাম্প্রতি পাহাড়ের ভোট নিয়েও বিস্ফোরক এই বিধায়ক। তাঁর সাফ কথা ২০২৪ এর নির্বাচনে দার্জিলিং থেকে কোন ভূমিপুত্রকে প্রার্থী করতে হবে, এমনকী শীর্ষ নেতৃত্ব কে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে এই বিধায়ক স্পষ্ট করে দেন তার শর্ত না মানা হলে প্রয়োজনে তিনি দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল হিসাবে ভোটে লড়াই করবেন।
অপরদিকে, ইতিমধ্যেই এই দার্জিলিং আসন নিয়ে ঠান্ডাযুদ্ধ শুরু হয়েছে এই দার্জিলিং এর বর্তমান সাংসদ রাজু বিস্ত ও হর্ষবর্ধন সিংলার মধ্যে। অভিযোগ, এই কেন্দ্রের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে হঠাৎ করে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি হর্ষবর্ধন সিংলা। যা নিয়ে রীতিমত অসন্তুষ্ট রাজু বিস্ত। প্রায় একই অবস্থা হুগলি লোকসভা আসনে, এই কেন্দ্রে র বর্তমান সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় এর বিরুদ্ধে পোস্টার মারছে দলীয় কর্মীরাই। লাগানো হয়েছে নিরুদ্দেশ এর ব্যানারও। বিষ্ণুপুর থেকে সৌমিত্র খা’র প্রার্থী পদ আটকাতে, বাঁকুড়া জেলার একটা বড় অংশের বিজেপি নেতা কর্মীরা আদা জল খেয়ে ময়দানে, তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী সুজাতা মণ্ডল এর তোলা অভিযোগ মনে করিয়ে রাজ্য নেতৃত্বকে বার্তা ও দিয়েছেন তারা।
একই অবস্থা বাঁকুড়া আসনে। বর্তমান সাংসদ কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডা: সুভাষ সরকার, অবস্থা এমন তিনি প্রার্থী হলে দলের নেতা- কর্মীদের বড় অংশ আদৌ তাঁর হয়ে ভোট করবে কিনা তাই লাখ টাকার প্রশ্ন।
একই অবস্থা রানাঘাট, বনগা আসনে। এই দুই আসনে বিজেপির বর্তমান সাংসদ জগন্নাথ সরকার ও শান্তনু ঠাকুর, বিজেপি সূত্রের খবর,রানাঘাট লোকসভার বিজেপি কর্মীরা ইতিমধ্যেই রাজ্য নেতৃত্বকে তাদের সাংসদকে নিয়ে অসন্তোষ লিখিতভাবে জানিয়েছে। বিশেষ করে প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও কোন কোন কাজ সাংসদ পূরণ করতে পারে নি, তার তালিকাও তুলে দিয়েছেন তাঁরা। একইভাবে মতুয়াদের একাংশ যে শান্তনু ঠাকুরের ওপর অসন্তুষ্ট তা হারে হারে টের পাচ্ছে বিজেপি।
বনগা লোকসভার একাধিক বিধানসভাতে কার্যত একাধিক গোষ্ঠীতে বিভক্ত বিজেপি। একই অবস্থা ব্যারাকপুর এর। এই আসনে পদ্ম টিকিটে জয়ী হন অর্জুন সিং, পরে তিনি দল বদলে যোগ দেন তৃণমূলে, স্বাভাবিকভাবেই অর্জুনহীন বিজেপি’র প্রার্থীপদ পাওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে গোষ্ঠীকোন্দল। সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে রাজ্য বিজেপির বড় অংশ, শুভেন্দু অধিকারী’র বিষয়ে অসন্তুষ্ট, একথা বাস্তব বঙ্গ বিজেপি এই মুহূর্তে কার্যত শুভেন্দুর ‘হাত’ এ। যা আদৌ মেনে নিতে পারছেন না মুরলিধর সেন লেনের আদি নেতৃত্বরা। সূত্রের খবর, ভোট যতো এগোচ্ছে তত প্রকট হয়ে উঠছে পুরোনো ও নব্য বিজেপির লড়াই। যে যে আসন ২০১৯ সালে নিজেদের দখলে রেখেছিল পদ্ম শিবির, প্রবল ভাবে সেই আসন ধরে রাখার চেষ্টা করছে বিজেপি। কিন্তু জমি বলছে অন্য কথা। লড়তে গিয়ে কার্যত মাথায় হাত বিজেপির রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। একাধিক গোষ্ঠী ও তাদের কোন্দলে জর্জরিত বিজেপি নেতৃত্বের অন্দরে এখন একটাই প্রশ্ন অমিত শাহ যে কোটা বেঁধে দিয়েছেন, সেই আসনের ধারে কাছে পৌঁছানো যাবে তো?