
নিজস্ব সংবাদদাতা, পাথরপ্রতিমা : ভিনরাজ্যে জীবিকার খোঁজে গিয়ে চিরতরে ঘরে ফেরা হলো না সুন্দরবনের যুবক শুভজিৎ বারুইয়ের। মাত্র ২১ বছর বয়সেই শেষ হয়ে গেল জীবনের পথচলা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমা ব্লকের দক্ষিণ সীতারামপুর গ্রামের বাসিন্দা শুভজিৎ গত সপ্তাহেই কাজের উদ্দেশ্যে উড়িষ্যার কটকে পাড়ি দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার বিকেলে, কাজ সেরে ফেরার পথে হঠাৎ বজ্রপাতে প্রাণ যায় তাঁর।
শুভজিতের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে গোবর্দ্ধনপুর কোস্টাল থানার জি প্লট গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই ছোট গ্রামটিতে। হতদরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন তিনি। বাবা একাদশী বারুই পেশায় মৎস্যজীবী। ছেঁড়া ছালার ঘরে কোনোমতে দিন গুজরান তাঁদের। ইতিমধ্যেই তিন কন্যার বিয়ে দিতে গিয়ে পরিবার ঋণে জর্জরিত।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অর্থকষ্টের চাপে পড়ে স্কুলের পড়া মাঝপথেই বন্ধ করে দিতে হয় শুভজিৎকে। কিশোর বয়সে মেদিনীপুরে ফিশারিতে শ্রমিকের কাজ করতে পাঠানো হয় তাঁকে। ২০২৩ সাল থেকে উড়িষ্যায় পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন। এক বছর আগে মা’য়ের ব্রেন টিউমারের অপারেশনের পর ঋণের বোঝা আরও বাড়ে। সেই ঋণ মেটানোর জন্যই গত সপ্তাহে আবার কটকে ফিরে গিয়েছিলেন শুভজিৎ। ফিরলেন কফিনবন্দি হয়ে।
বজ্রপাতে মৃত্যুর পরে এখনও পর্যন্ত কোনও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা হয়নি। জানা গিয়েছে, তাঁর কোনও শ্রমিক কার্ডও ছিল না। পুত্রশোকে মুহ্যমান পরিবার। সরকারি স্তরে যোগাযোগ করে মৃতদেহ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ চলছে বলে খবর। পরিযায়ী শ্রমিকদের নথিভুক্ত না থাকার ফলে বিপদের সময় মিলছে না সরকারি সহায়তাও। শুভজিতের মতো আরও কত যুবক যে এমন ভাগ্যের শিকার, তার কোনও হিসেব নেই। এখন দেখার, প্রশাসন কতটা দায়িত্ব নেয় এই দুঃস্থ পরিবারের পাশে দাঁড়াতে।