
শুক্লা মাইতি, কলকাতা : টুকটুকে লাল বেনারসি, সোলার মুকুটে যেন ১৮ বছরের ফুটফুটে কণেটি দেখাচ্ছে রিঙ্কুকে, অন্যদিকে তসরের পাঞ্জাবী, কোঁচানো ধুতি…, সখের দাম লাখ টাকা ! সখ যে কোনরকম বয়সের গন্ডি মানে না তা প্রমান করল রিঙ্কু-দিলিপ জুটি।
“ব্রহ্মচার্য ছেড়ে প্রেমচার্য!” — দিলীপ ঘোষের বিয়েতে রাজনীতি নয়, এবার ‘রোম্যান্স’ চর্চার সময়। নিউটাউন এখন ‘ঘোমটা টাউন’! কারণ, বিজেপির চির-ব্রহ্মচারী ষাঠোর্দ্ধ ‘জাঁদরেল” সঙ্ঘ-প্রচারকের দিলীপ ঘোষ গলায় মালা পরেছেন পঞ্চাশ পেরানো নববধূ ! হ্যাঁ, বিশ্বাস না-হলেও এটাই সত্যি। এতদিন যিনি রাজনীতির মাঠে বুলডোজার চালিয়েছেন, তিনি কিনা বিয়ের পিঁড়িতে ! তাতো ভাইরাল হবেই। কাল থেকে বাংলা তাই দিলীপে মজেছে। কিন্তু তিনি কী ভাবে মজলেন রিঙ্কু মজুমদারে ! ছুতমার্গ না রেখে যিনি বরাবর অকপট বুলি ছোঁড়েন, তিনি যেন কোথায় একটা সানাইয়ের আলাপ হয়ে উঠলেন। একেই বুঝি প্রেম বলে ! জীবনের এই অচেনা অধ্যায়টি আর বাকি রইল না। সাতপাকে বাঁধা পড়লেন তিনি। কি ভাবে ? দিলীপ জানিয়েছেন মনে মনে এই অন্য দিলীপের ভাষায়।!
রাজনীতির মাঠ কাঁপানো দিলীপবাবু হঠাৎ একদিন বুঝলেন, গ্লাসে জল ঢালার মতো একটা সম্পর্ক জীবনে নেই ! তাঁর কথায়, “মা আছেন ঠিকই, পরিচারিকাও আছে। কিন্তু একটা গ্লাস জল এগিয়ে দেবে এমন কেউ নেই।” ঠিক সেইখানেই আবির্ভাব রিঙ্কুর। যিনি সরাসরি বললেন, “দিলীপ দা, তুমি কেন সারাজীবন একা থাকবে ? চল বিয়ে করি, আমি তোমার সংসার সামলে দেব।”
তারপর কোত্থেকে কেটে গেল মাঝের দিনগুলি। অবশেষে শুক্রবার বিয়ের পিড়িতে বসলেন দিলীপ ঘোষ। যদিও রিঙ্কু এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে অকুত ভয়ে, মনের গভীরের গোপন কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করে নিলেন। কোনও সঙ্কোচ না রেখেই বললেন, আর কতদিন সমাজ ও পরিবারের জন্য করব। নিজের জন্যও তো ভাবতে হবে। আমারও একটা জীবন রয়েছে, সাধ রয়েছে, ইচ্ছে রয়েছে।
এ যেন রাজনীতির মঞ্চ ছেড়ে স্টেজে হঠাৎ প্রেমের নাটক। দিলীপবাবু প্রথমে একটু অপ্রস্তুত। কিন্তু মা যখন বললেন “ইয়েস”, তিনিও ‘ব্রহ্ম’ অবস্থা থেকে বেরিয়ে এলেন। শুধু বললেন, “আমি মিশনে অবিচল থাকব।” তবে এবার মিশনের সঙ্গে ‘মিসেস’ জুড়ে গেল বলেই মনে হচ্ছে।
অন্যদিকে, নববধূ রিঙ্কু জানালেন, “বাইরে থেকে কঠিন মনে হলেও দিলীপ একেবারে সফট বয়। প্রেমিক হিসেবে একশোতে একশো !” রিঙ্কু আরও বলেন, “বিয়ের প্রস্তাবটা আমিই দিয়েছিলাম। কারণ বুঝতে পারতাম, উনিও আমায় পছন্দ করেন। একটু সাহস করেই বলেছিলাম।”
এখন দিলীপ-রিঙ্কুর বিয়ে মানে আর ঘরোয়া ব্যাপার নয়। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সকালেই শুভেচ্ছা জানিয়ে গেলেন। দুপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘর থেকে ফুল এসে হাজির — এ যেন রাজনৈতিক ‘লাভ জেহাদ’! বস্তুত, দিলিপ-রিঙ্কুর প্রেমকথা চা-এর সঙ্গে গুজব নয়, “খবর” হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে রাজ্যজুড়ে ! সূত্রের খবর বিয়ের ভুরিভোজে থাকছে লুচি ,ছোলার ডাল ,ভাত মিক্সড ভেজ, ছোট মাছ, বড় মাছ,মিষ্টি, রসগোল্লা, ছাড়া আরও অনেক লভনীয় খাবার।
পরিশেষে নবদম্পতি সুখি হক এমনটাই কামনা সকলের।