
শুভাশিস চট্টোপাধ্যায়ঃ স্বাধীনতার পর থেকে এই প্রথম বাম শুন্য রাজ্য বিধানসভা। বিধানসভায় বামেদের এবার একটাও আসন নেই। এই নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনায় হতাশা গোপন করেন না প্রবীন বাম নেতারা। কিন্তু সেই ব্যর্থতার কনা মাত্র আঁচ পড়েনি পুজোর মার্কসীয় বুক স্টলগুলিতে। সেখানে রমরমিয়ে ক্লাসিক্যাল মার্কসীয় বইয়ের সঙ্গে বিকোচ্ছে, ফ্রয়েড, জ্যোতিবাবু, চারু মজুমদার, দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের সঙ্গে শিবদাস ঘোষের বইও। ষষ্ঠী, সপ্তমী আর অষ্টমী এই তিন দিনে শুধুমাত্র কলকাতাতেই মার্কসীয় বুক স্টলগুলিতে বিক্রির পরিমান চোখ কপালে তোলার মত। তিনদিনে বই বিক্রি হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকার। স্টলে বসা বাম নেতা কর্মীরাও এক বাক্যে স্বীকার করছেন এবার তাঁদের বই বিক্রির পরিমান বেশ ভালো। গাঙ্গুলিবাগানের অশোক ট্রাস্টে দীর্ঘদীন ধরে বইয়ের স্টল দিয়ে আসছে সিপিএম। পাশাপাশি কেন্দুয়াতেও প্রায় তিন দশক ধরে স্টল দিচ্ছে সিপিএমের মধ্য যাদবপুর এরিয়া কমিটি। রবীন্দ্রপল্লী ১ নম্বর ব্রাঞ্চের সম্পাদক অলোক বনিক বলেন রাজ্যে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের হাতিয়ার বই।
ঢাকুরিয়া ব্রিজের কাছে বাবু বাগান পুজো মণ্ডপে ঢোকার গলির মুখে নকশালপন্থী সংগঠন লিবারেশন সেই ৮২ সাল থেকে এখানে স্টল দিয়ে আসছে। পার্টি তখন অবশ্য গোপন থাকায়, সেই সময় স্টল দেওয়া হতো গন সংগঠন আইপিএফের নামে। পার্টির মুখপত্র দেশব্রতী, লিবারেশন ছাড়াও এখানে রয়েছে চারু মজুমদারের লেখা দলিল, নকশালবাড়ির সংগ্রামের ইতিহাস, অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের উপর বই, বিনোদ মিশ্র সমগ্র ছাড়াও মার্কস, লেনিন, এঙ্গেলস, মাও সে তুং, ফ্রয়েডের লেখা বই। রয়েছে আধুনিক নবীন, প্রবীন লেখকদের বইও। স্টলে বইও কিনছেন এখনকার প্রজন্মের পাঠক পাঠিকা। সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌখাট পেরনো আইটিতে চাকরিরত অরিত্রা দে প্রতিবছরের মতো এবছরও এসেছেন এখানে বইয়ের সন্ধানে। তাঁদের বই বিক্রি যে বেশ সন্তোষ জনক বললেন যাদবপুর- ঢাকুরিয়ার ৯২ নম্বর ওয়ার্ডের ব্রাঞ্চ সম্পাদক ভরত দাস। লিবারেশনের বই স্টলের পাশেই সিপিএমের বুক স্টল। আর দশ কদম দুরে সিপিআই-এর স্টলও বেশ জমজমাট। প্রায় ৫০ বছর ধরে এখানে স্টল দিয়ে আসছে সিপিআই। এবছর বইয়ের ক্ষেত্রে খোলা হাওয়া এনেছেন তারা। ক্লাসিক্যাল মার্কসীয় তাত্বিক বইয়ের পাশাপাশি সিপিআইয়ের স্টলে এবার জায়গা পেয়েছে ছোটদের ছড়ার বই, আঁকার বই, সুকুমার রায়ের আবোল তাবোলও। ঢাকুরিয়া লোকাল কমিটির সম্পাদক গোপাল চক্রবর্তী জানান অষ্ঠমী পর্যন্ত তাঁদের বিক্রি প্রায় সাড়ে সাত হাজার টাকা।
ঢাকুরিয়া স্টেশনের কাছে ৯২ সাল থেকেই স্টল দেয় এসইউসিআই। এবছর লেনিনের মৃত্যু শতবর্ষ। তাই লেনিনের বইয়ের পাশাপাশি এখানে পাওয়া যাচ্ছে এসইউসিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারার পুস্তকও। তাদের বিক্রি বাট্টা নেহাত মন্দ নয় জানালেন স্থানীয় এসইউসিআই নেতা রণজিৎ কুমার মণ্ডল।
বামপন্থীদের বহু পুরনো স্লোগান ছিল শিক্ষা আনে চেতনা, আর চেতনা আনে বিপ্লব। প্রবীন পক্ককেশের বাম নেতারা মুচকি হেসে বলছেন এমন চললে এবছর পুজোতে ৫০ লক্ষের গন্ডিও তারা হেলায় পার করে ফেলবেন। বই বিক্রির বহর দেখে অনেক অত্যুতসাহী কমরেড আবার নতুন করে যে স্বপ্ন দেখবেন না, তা হলফ করে বলা যায় না।