
ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী, কলকাতা: সোমবার সকালে ৮ দফা দাবি নিয়ে রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থকে মেইল করেছে জুনিয়র ডাক্তারদের পাল্টা সংগঠন জুনিয়র ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন। মুখ্য সচিব কে পাঠানো এই ই-মেইলে, জুনিয়ার ডক্টর্স ফ্রন্ট এর প্রতি বিরোধ ফুটে উঠেছে দফায় দফায়।
ইমেইলের আট দফা দাবিতে বলা হয়েছে, আরজি করে নির্যাতিতার বিচার এবং দোষীদের শাস্তি হিসেবে ফাঁসির সাজাকে সুনিশ্চিত করতে হবে, রাজ্যের যাবতীয় মেডিকেল কলেজে থ্রেট কালচার সম্পর্কিত যাবতীয় অভিযোগের তদন্ত করতে হবে, ডাক্তার নার্সকে স্বাস্থ্যকর্মীদের উপযুক্ত নিরাপত্তা এবং রোগী পরিষেবা উন্নত পরিকাঠামো দিতে হবে, জুনিয়ার ডক্টর্স ফ্রন্ট-এর বিরুদ্ধে ওঠা আর্থিক বিনিয়মের অভিযোগের তদন্ত করতে হবে, থ্রেট কালচারের অভিযোগের বিষয়ে এক পক্ষের বক্তব্য শুনে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না, সরকার কর্তৃক তৈরি করা কমিটিগুলোতে ফ্রন্ট এবং অ্যাসোসিয়েশনের সমান প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে, জুনিয়ার ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন কে সংগঠনের স্বীকৃতি দিতে হবে, স্বাস্থ্য নিয়োগে অভিজ্ঞতার পাশাপাশি মেধাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট তাদের ১০ দফা দাবিতে নির্যাতিতার বিচার এবং দূষিতের শাস্তি সুনিশ্চিত করতে বললেও ফাঁসির সাজাকে নির্দিষ্ট করেনি যেখানে অ্যাসোসিয়েশন নির্দিষ্ট করে দোষীদের ফাঁসির দাবি করেছে। অন্যদিকে সব মেডিকেল কলেজে অভিযোগের তদন্ত, ডাক্তার অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীদের নিরাপত্তা এবং রোগী পরিষেবার পরিকল্পনা বাদে বাকি দাবিগুলোতে ডক্টর্স ফ্রন্টের সাথে স্পষ্ট বিরোধ পরিলক্ষিত হচ্ছে।
আরজিকর হাসপাতালের নির্যাতিতার জন্য বিচারের দাবিতে শুরু থেকেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে জুনিয়র ডক্টর্স’ ফ্রন্ট। সেই আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে একাধিক আর্থিক বেনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বলে দাবি করেছে নয়া সংগঠন জুনিয়ার ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ, এমনকি নির্যাতিতার জন্য বিচারের দাবি নিয়ে যে তহবিল গঠন করা হয়েছে, সেখানেও বেনিয়ম হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের এই নতুন সংগঠন চায়, ওই অভিযোগগুলির ভিত্তিতে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণ করুক। ওই তহবিলের অডিট করার দাবিও তুলেছেন অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যেরা।
এছাড়াও এই ইমেইলে আরো একটি দাবি করা হয়েছে। এই ইমেইলে জুনিয়ার ডক্টর্স ফ্রন্ট এর মতই অ্যাসোসিয়েশনও কেবি হোস্টেলের ৩২ নম্বর ঘরকে নিজেদের ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করেছে এবং তারা জানিয়েছেন যে সংগঠনকে স্বীকৃতি দিলে এই ঘর তাদেরকে ব্যবহার করতে দিতে হবে নচেৎ, তা যেন জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট কে ব্যবহার করতে না দেওয়া হয়।
জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট এর কনভেনশনের আগেই আত্মপ্রকাশ করে জুনিয়র ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন। তখন থেকেই এই দুই সংগঠন নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। প্রথমেই জল্পনা সামনে আসে যে, স্বাস্থ্য ভবনে অবস্থানকালীন অবস্থানকারী জুনিয়র ডাক্তারদের একটা অংশ তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুনাল ঘোষের সাথে বৈঠক করেন। পরে ধর্মতলায় অনশন চলাকালীন কুনাল ঘোষের সাথে বৈঠক করেন ডঃ নারায়ণ ব্যানার্জি। সেই ভিত্তিতেই কি হঠাৎ ‘তৃণমূলের ছত্রছায়াতে’ এই সংগঠন তৈরি হলো? বিতর্ক আবারও সামনে আসে যখন নির্যাতিতার ধর্ষণ ও খুনে প্রমাণ লোপাটে অভিযুক্ত সন্দীপ ঘোষের সাথে অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বদের ছবি প্রকাশে আসে। প্রসঙ্গত জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি নিয়ে নবান্নে বৈঠকের দিন ফ্রন্টের সদস্যদের সাথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক দফা বাগবিতণ্ডা হয়। ৫১ জনের সাসপেনশন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশ্ন ওঠে কর্মবিরতি নিয়েও। এইদিন মুখ্য সচিব কে পাঠানো আট দফা দাবির এই ইমেইলে মুখ্যমন্ত্রী সেদিনের প্রশ্নের ছাপ স্পষ্ট বলেই মনে করছে আন্দোলনকারীদের একাংশ।