
সম্পূর্ণা সেনগুপ্ত, ওঙ্কার ডেস্ক: কথায় আছে, “স্বাস্থ্যই সম্পদ”। কিন্তু, নিত্যদিনের দৌড়ঝাঁপের জীবনে আমরা প্রায়শই চেয়েও নিজেদের শরীরের যত্নের দিকে বিশেষ নজর দিতে পারিনা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীরে বাসা বাঁধে নানান ধরনের রোগ। কিন্তু, অনিয়মের কারণে শরীর সময়ের সাথে সাথে দুর্বল হয়ে পড়ে। হারিয়ে ফেলে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ ক্ষমতা ও প্রতিরোধকারী শক্তি। তাই আজকের দিনে শারীরিক ও মানসিক ভাবে ফিট থাকা একান্ত আবশ্যক।
ফিট থাকার নতুন উপায়, পিলাটেস:
সেই প্রাচীনকাল থেকেই শরীর চর্চা, ব্যায়াম, ইত্যাদি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের এক অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে এসেছে। কার্ডিও, ওয়েট ট্রেনিং, নাচ, Zumba, যোগাসন ইত্যাদি নানান পদ্ধতিতে শরীরের মেদ কমানো, এবং ফিটনেস ধরে রাখার পদ্ধতি বহুকাল ধরেই বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু, ২১ শতকে দাঁড়িয়ে ফিটনেস এর দুনিয়ায় নিজের আলাদা জায়গা করে নিয়েছে পিলাটেস। যোগাসন এবং স্ট্রেংথ ট্রেনিংয়ের যুগলবন্দী এই পিলাটেস রিহ্যাবিলিটেশন এক্সারসাইজ। খুব ধীর গতিতে সময় ধরে ধরে শরীরের প্রত্যেকটি অংশের মাংসপেশীকে ভিতর থেকে শক্তিশালী, কার্যকর, এবং ফ্লেক্সিবল বানাতে বিশেষ উপকারী এই পিলাটেস। জোসেফ পিলাটসের এর হার ধরে সেই ১৯২০ থেকে প্রায় ১২৪ বছর ধরে সারা পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন মানুষকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করে চলেছে এই পিলাটেস।
পাখির চোখ:
পিলাটেস শুধমাত্র আপনাকে ফিট থাকতেই সাহায্য করেনা, বরং, স্লীপডিস্ক, আর্থরাইটিস, বোনম্যারো স্ট্রেংথ, ফ্রোজেন শোল্ডার, ক্রোনস, স্পণ্ডিলাইসস ইত্যাদির মোটর জটিল সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয়। সেলিব্রিটি ফিটনেস এক্সপার্ট তথা পিলাটেস বিশেষজ্ঞ *ইয়াসমিন করাচিওয়্যালা* জানাচ্ছেন, পিলাটেস একত্রে স্ট্রেংথ ও মবলিটির এক অনন্য যুগলবন্দী। নিয়মিত পিলাটেস অভ্যাস শরীরের বিভিন্ন পেশীকে ভিতর থেকে মজবুত করে, শরীরে হাড়ের জয়েন্ট গুলোকে সচল রাখে। পাশাপাশি, নার্ভাস সিস্টেম কে আরো উন্নত ভাবে কাজ করতে এবং শারীরিক ব্যালেন্স বৃদ্ধি করে রোগ প্রতিরোধে বিশেষ সাহায্য করে। তাই মাধুরী দীক্ষিত থেকে প্রীতি জিনটা, দীপিকা পাড়ুকোন থেকে আলিয়া ভট্ট – প্রত্যেক বলি সুন্দরীই এই পিলাটেস অভ্যাস করেন।
ইয়াসমিন আরো জানিয়েছেন, যেহেতু, পিলাটেস অভ্যাস করতে কোনো প্রকার ওয়েট বা ইনস্ট্রুমেন্ট প্রয়োজন হয়না, ফলতঃ যে কোনো জায়গায় যে কোনো সময়ে অনায়াসেই এর চর্চা করা যায়। তবে, ট্রেনারের নির্দেশ অনুযায়ী আপনি গ্রিপ সহ নানান প্রকার পিলাটেস মোজাও ব্যবহার করতে পারেন।
মেদ ঝরাবে পিলাটেস:
মেদ ঝরাতেও পিলাটেস বিশেষ সাহায্য করে। শরীরের অতিরিক্ত চর্বি গলিয়ে সুঠাম শরীর গঠনে একান্ত আবশ্যক পিলাটেস। অ্যাপেল ওয়াচ স্ট্যাট অনুযায়ী একটি ৩০-৪৫ মিনিটের পিলাটেস সেশনে প্রায় ২৫০-৪০০ কিলো ক্যালোরি বার্ন হয়। অতএব একই সাথে শরীরের মেদ কমার পাশাপাশি মাসেলের শক্তি বাড়ে পিলাটেসে। পঁয়ত্রিশ ঊর্ধ্ব মহিলাদের চেহারার তন্বী শেপ ধরে রাখতে অব্যর্থ পিলাটেস।
নানান ধরনের পিলাটেস
সময়ের সাথে সাথে বদলেছে পিলাটসের ধরণ, যুক্ত হয়েছে নানান নতুন কায়দা। যেমন ক্লাসিক ম্যাট পিলাটেস, গ্রুপ রিফর্মার পিলাটেস, কন্টেম্পোরারি স্টুডিও পিলাটেস, ক্লিনিক্যাল পিলাটেস ইত্যাদি।
অবশ্যই খেয়াল রাখুন:
পিলাটেস অভ্যাস করার সময় দরকার একাগ্রতা এবং নিষ্ঠা। যে কটা বিষয় মনে রাখতেই হবে তা হল, সঠিক শ্বাস – প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ, পেশী সংকোচন, ও প্রসারণ, শরীরের মুভমেন্ট, শোল্ডার, চেস্ট, ট্রাইসেপ, আপার অ্যাব, লোয়ার কোর, পেলভিক ফ্লোর মাসলগুলির সঠিক কেন্দ্রিকতা / সেন্টারিং ইত্যাদি। অতএব একজন প্রশিক্ষকের তত্বাবধানে থেকে তবেই অভ্যাস করুন পিলাটেস। পিলাটেস এক ধরনের বিশেষ ব্যায়াম যা একাধারে লো-ইম্প্যাক্ট অথচ হাই ইনটেনসিটি। শরীর গঠনের পাশাপাশি, নানান প্রকার জটিল রোগ নিরাময় করতেও একান্ত কার্যকরী এই পিলাটেস। তাই নীরোগ ও সুস্থ্য জীবন যাপন করতে নির্দ্বিধায় সঙ্গী করতে পারেন পিলাটেসকে।