
সুরজিৎ দাস, নদীয়াঃ গ্রামের অস্বত্থ তলায় ,শান বাঁধানো বেদীতে হাত পা ছড়িয়ে উপোড় হয়ে শুয়ে রয়েছেন গ্রামবাসীদের আরোধ্য দেবতা। নাম স্কন্দনাশা। মুণ্ডহীন তার দেহ পিঠ ঘেঁষে রয়েছে নাক, মুখ, চোখ।এই লোক দেবতার পুজো করা হয় নদীয়ার নাকাশিপাড়া থানার অন্তর্গত পাটকেবাড়ি পঞ্চায়েতের তৈবিচারা গ্রামে। মহিলারা পৌষ সংক্রান্তির দিন থেকে পরপর তিনদিন এই অদ্ভুত দর্শন দেবতার আরাধনা করেন। পৌষ পার্বণ কে কেন্দ্র করে নানান লৌকিক পুজো ও উৎসবের প্রচলন রয়েছে গ্রাম বাংলায় । তবে স্কন্দনাশা দেবতার পুজো পদ্ধতি সবার চেয়ে আলাদা। এই দেবতার পুজো করা হয় মূর্তির পিছন দিক থেকে
লোকমুখে শোনা যায়, আনুমানিক ৮০ বছর আগে ঢাকার এক পরিবার এই গ্রামে এসে এই কবন্ধ মূর্তির পুজো শুরু করেছিলেন। ক্রমে পারিবারিক গণ্ডি পার করে তা গ্রামের বারোয়ারি পূজো হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই পরিবারে উত্তরসূরী স্বপন সরকার জানান,
প্রয়াত পূর্ণচন্দ্র সরকার ও জেঠিমা অবলা সরকার নিঃসন্তান ছিলেন। সন্তান লাভের আশায় এই পুজো করেন তারা। কথিত আছে তিনি স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন অনেক সন্তান হবে তার। পরবর্তীকালে তার জেঠু জেঠিমার প্রচুর শীর্ষ ছিলেন , তাদেরকেই সন্তান ভাবতেন তারা। পুজোর বর্ণনা দেওয়ার সময় তিনি বলেন, বাবা জ্যাঠাদের কাছে শুনেছি শিবের অনুচর হিসেবে পূজিত হন এই দেবতা। নির্দিষ্ট কোনও মন্ত্র নেই। কিন্তু এই পুজো করতে হয়, খুব সাবধানে এবং শুদ্ধ বস্ত্রে। আগে পৌষ সংক্রান্তির দিন মাটি দিয়ে এই মূর্তি তৈরি করা হতো। রোদ, জলে বার বার মূর্তি নষ্ট হয়ে যেত বলে কয়েক বছর আগে স্থায়ী ভাবে সিমেন্টের মূর্তি গড়া হয়েছে।
লোকমুখে জানা যায় এই পুজো করতে হয় দেবতার পায়ের কাছে বসে। অর্থাৎ মূর্তির পিছন দিকে। পৌষ সংক্রান্তির রাতে আলো বিহীন গাছ তলায় গা ছমছমে পরিবেশে মোমবাতি, প্রদীপ, ধুপ নিবেদন করা হয় স্কন্দনাশা দেবের পায়ে। বাংলার বিভিন্ন এলাকায় হ্যাঁচরা পুজো, যম পুজো থেকে শুরু করে একাধিক পূজোর প্রচলন রয়েছে ।স্কন্দনাশা পুজো তার মধ্যে অন্যতম।