
নিজস্ব সংবাদদাতা, মুর্শিদাবাদ : রাজ্যের উত্তপ্ত রাজনৈতিক আবহে মুর্শিদাবাদে হিংসার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে সরাসরি কথা বললেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। শনিবার জেলায় পরিদর্শনে এসে মৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। জাফরাবাদে নিহত হরগোবিন্দ এবং চন্দন দাসের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন। উপস্থিতদের অনেকেই রাজ্যপালের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। অভিযোগের সুরে জানান, এখনও তাঁদের ভয় দেখানো হচ্ছে, এলাকা ছাড়তে না চাইলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে প্রাণনাশের।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যপাল জানিয়েছেন, কারও কোনও সমস্যা হলে যেন সরাসরি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সেই উদ্দেশ্যেই তিনি রাজভবনের পিসরুমের ফোন নম্বর সরবরাহ করেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে। তাঁর আশ্বাস, “যেকোনও সমস্যা হলে বিনা দ্বিধায় ফোন করবেন। রাজভবন আপনাদের পাশে আছে।”
এই পরিদর্শনের সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তাও অগ্রাহ্য করেন রাজ্যপাল। মুখ্যমন্ত্রী আগে থেকেই অনুরোধ জানিয়েছিলেন, যেন এখনই কেউ মুর্শিদাবাদ বা মালদহে না যান। তবে সেই অনুরোধকে গুরুত্ব না দিয়ে পূর্বনির্ধারিত সূচি মেনেই রাজ্যপাল পৌঁছে যান মালদহ ও মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন অঞ্চলে। শুক্রবার মালদহ সফরের পর শনিবার মুর্শিদাবাদের জাফরাবাদ, সুতি, ধুলিয়ান ও সামশেরগঞ্জ-সহ একাধিক অশান্ত এলাকায় যান তিনি।
ক্ষতিগ্রস্তরা রাজ্যপালের কাছে বারবার বিএসএফ ক্যাম্প বসানোর দাবি জানান। তাঁদের বক্তব্য, প্রশাসন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, তাই কেন্দ্রীয় বাহিনীই একমাত্র ভরসা। রাজ্যপাল বলেন, “রাজ্যে শান্তি ফেরানোই এখন প্রাথমিক লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে রাজ্য সরকারের উচিত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। হিংসার রাজনীতি নয়, মানবিকতা ও সহানুভূতির পথে চলাই সময়ের দাবি।”
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ওয়াকফ আইন নিয়ে বিতর্কের জেরে মুর্শিদাবাদের একাধিক এলাকায় তীব্র হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। সুতি, ধুলিয়ান, সামশেরগঞ্জ-সহ বিভিন্ন অঞ্চলে ঘরছাড়া হয়েছেন বহু মানুষ। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকেও তৎপরতা দেখা গিয়েছে। রাজ্যে বর্তমানে রয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা। তাঁরা আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তুলে নিয়েছেন বিবরণ।
এর আগেই, বৃহস্পতিবার রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার-সহ অন্য নেতারা। তাঁদের অভিযোগ, মুর্শিদাবাদে যাঁরা ঘরছাড়া হয়েছেন, তাঁদের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। সেই সঙ্গে তাঁরা রাজ্যপালের কাছে পাঁচ দফা দাবি পেশ করেন। বিজেপির তরফে দাবি করা হয়েছে, সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই রাজ্যপাল সিদ্ধান্ত নেন নিজে এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার।
মুর্শিদাবাদের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন এখন রাজ্যপালের আশ্বাসকে কেন্দ্র করেই আশার আলো দেখছেন। প্রশাসনিক পদক্ষেপের পাশাপাশি মানবিক সহানুভূতির প্রত্যাশাতেই দিন গুনছেন তাঁরা। শান্তি ও স্বাভাবিকতার পথে ফেরার জন্য সকলের দিক থেকেই জোরালো পদক্ষেপের দাবি উঠছে।