
তামসী রায় প্রধান, ওঙ্কার বাংলাঃ বছর ঘুরলে লোকসভা নির্বাচন। আর লোকসভা ভোটের আগে শেষ শহীদ দিবস। আর এই দিনটি তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে সবথেকে বড় রাজনৈতিক মঞ্চ। কাজেই, এই সমাবেশ থেকে আগামী লোকসভা ভোট নিয়ে বার্তা দেবেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেকথা বিলক্ষণ জানতেন রাজ্যের রাজনীতি-সচেতন মানুষ। বাম কংগ্রেসের প্রতি নরম মনোভাব দেখিয়ে আক্রমণ করলেন কেন্দ্রের শাসক বিজেপিকে। তৃণমূলের অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন দলনেত্রী। বললেন, “INDIA লড়বে, তৃণমূল কংগ্রেস পাশে সৈনিকের মত ঝান্ডা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে”।
সম্প্রতি পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে অশান্তি ও হিংসা দেখা গিয়েছে রাজ্যে। ভোট লুট, বুথ দখল, ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ উঠেছে শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বাম ও কংগ্রেসের স্থানীয় স্তরের নেতৃত্বের তৃণমূলকে নিয়ে চূড়ান্ত ক্ষোভ প্রকাশ্যে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে একুশে জুলাই শহীদ দিবসের মঞ্চ থেকে মমতা স্পষ্ট করে দিলেন বাম বা কংগ্রেস নয় তাদের রাজনৈতিক শত্রু বিজেপি। তিনি বৃষ্টিভেজা ধর্মতলায় দাঁড়িয়ে প্রমাণ করলেন, তিনি বিজেপি-বিরোধী বৃহত্তর জোটের অংশ। মমতা বললেন, “INDIA লড়বে, তৃণমূল কংগ্রেস পাশে সৈনিকের মত ঝান্ডা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। আমি বলে দিয়েছি, আমাদের চাওয়ার কিছু নেই। আমরা একটাই চাই, লেট ইন্ডিয়া উইন, লেট বিজেপি লুজ”। যা সহজ বাংলায় ইন্ডিয়া জিতুক, বিজেপি হারুক।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ ও ১৮ জুলাই বিজেপি-বিরোধী দলগুলি বেঙ্গালুরুতে বৈঠকে বসে। সেখান থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধী শিবিরের রাজনৈতিক দলগুলি। বিরোধীদের নতুন জোটের নাম দেওয়া হয়েছে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স। অর্থাৎ INDIA । বৈঠকের শেষ দিনে সাংবাদিক বৈঠক থেকে বিজেপি জোট NDA-কে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তিনি বলেন, ‘INDIA-কে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে NDA ? বিজেপি তোমরা কি INDIA-কে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে?’
শুক্রবার ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ থেকে মমতা বললেন, লেট ইন্ডিয়া উইন, লেট বিজেপি লুজ, মোদি হারবেন, বিজেপি হারবে। এটাই আমাদের একমাত্র স্লোগান। এদিন তৃণমূলের তরফে, ২৬টি রাজনৈতিক দলকেই অভিনন্দন জানান মমতা। পাশাপাশি তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের শপথ নিতে বলেন তিনি, ‘অত্যাচার করব না। অনাচারে মানুষকে মরতে দেব না।’ শুধু তা-ই নয়, লোকসভা ভোটের আগে জোটবদ্ধ লড়াইয়ের লক্ষ্যে মণিপুর ইস্যুতেও সুর চড়িয়ে সেখানে প্রতিনিধিদল যাওয়ার কথা বললেন। মমতা বলেন, “আমার সঙ্গে অরবিন্দর কথা হয়েছে। আমরা চাইছি, INDIA থেকে একটা দল মণিপুরে যায়। মুখ্যমন্ত্রীদের দল। সেখানে গিয়ে ক্যাম্পে মিলিত হই। তাদের সঙ্গে দেখা করি। তারাও চাইছে। সব দল যদি এতে সম্মতি দেয়, তাহলে আমরা নিশ্চয়ই যাব।”
এর আগে কখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সিপিআইএম বামেদের প্রতি এত নরম হতে দেখা যায়নি। এদিন একবারই তাঁর বক্তৃতায় বামেদের প্রসঙ্গ টানেন। মমতা বলেন, ‘‘বুদ্ধদেববাবুর আমলে কী হয়েছিল? মমতার নামে আপনাদের তো চিরকাল ‘অ্যাল্যার্জি’! ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০০৮ সালে ভোটের দিনে ৩৯ জন মারা গিয়েছিল। এ বার মারা গিয়েছেন ২৯ জন। তার মধ্যে তৃণমূলেরই ১৮ জন”। তিনি আরও বলেন, ‘‘৭১ হাজার বুথে ভোট হয়েছে। ভাঙড়ে হাঙরেরা গোলমাল করেছে। ডোমকলে গোলমাল হয়েছে। সেখানে আমরা হেরেছি। চোপড়া-ইসলামপুরে আর কোচবিহারে গোলমাল হয়েছিল। যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তার জন্য আমি দুঃখিত”। মমতা বলেন, ‘‘আমাদের পঞ্চায়েতগুলো সিপিএমের সরকারের কায়দায় কাজ করবে না। আমাদের সরকারের মতো করবে”। ২০২৪ লোকসভা ভোটের আগে শেষ শহীদ দিবসে বুঝিয়ে দিলেন তিনি জোটের পক্ষে। বিজেপির বিপক্ষে।