
শিল্পা নাথ:দ্রুত অফিস বা নিজের প্রিয় মানুষের কাছে যাওয়ার জন্য রেলের কোন বিকল্প হয়না। ভারতে রেল চলাচল শুরু হয় ব্রিটিশ শাসনকালে ,মুম্বাই থেকে থানে পর্যন্ত । সালটা ছিল ১৮৫৩।। সময়ের সাথে সাথে ক্রমশ উন্নতির পথে হেটেছে ভারতীয় রেল। রেলপথ পৌঁছে গেছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল গুলিতে, সঙ্গে বেড়েছে রেল সংখ্যাও। তবে ভোগান্তি কম হয়নি সাধারণ মানুষের। রেল ব্যবস্থার উন্নতির সাথে সাথে বিভিন্নভাবে বেড়েছে রেল দুর্ঘটনার সংখ্যা।
পুরনো রেকর্ড দেখলে জানা যায় ১৯৮০-র দশক থেকে ২০০০ দর্শক পর্যন্ত প্রতি দশকের রেল দুর্ঘটনার সংখ্যা যা ছিল তা প্রায় তিন গুণ বেড়ে যায় ২০১০-এর দশকে। ১৯৮০-র দশকে রেল দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ১৮টি যার মধ্যে বিহার রেল দুর্ঘটনা এখনো পর্যন্ত সব থেকে ভয়াবহ দুর্ঘটনার মধ্যে একটি। প্রায় ৭৫০-র ও বেশি মানুষ নিহত হন এই দুর্ঘটনায়। ১৯৯০ -এর দশকের রেল দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ৩৪ টি যার মধ্যে ১৯৯৫ সালের ২০শে আগস্ট ফিরোজাবাদ রেল বিপর্যয়ে নিহত হন ৪০০ জন মানুষ এবং ১৯৯৮ সালের ২৬ শে নভেম্বর খান্না রেল বিপর্যয় মারা যায় প্রায় ২১২ জন মানুষ। ২০০০-এর দশকে ঘটে যায় ২৫ টি রেল দুর্ঘটনা যার মধ্যে ২০০২ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর হাওড়া রাজধানী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা, যাতে নিহত হন ১৪০ জনের বেশি মানুষ এবং ২০০৬ সালের ১১ই জুন মুম্বাইট্রেন বোমাহামলা দুর্ঘটনায় নিহত হন ২০০ জন মানুষ এবং ৭০০ জনের বেশি মানুষ আহত হন। এরপর ২০১০-এর দশকে এই রেল দুর্ঘটনার সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৮০তে, ২০১০ সালের ২৮ শে মে পশ্চিমবঙ্গের জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় নিহত হন ১৪০ জন মানুষ এবং ২০০ জন আহত হন। বলা বাহুল্য ২০২০ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত মাত্র চার বছর ২৪ টি রেল দুর্ঘটনা ঘটে যায় ভারতবর্ষে। যার মধ্যে ২০২৩ সালের ২রা জুন উড়িষ্যার করমন্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার মত মর্মান্তিক ঘটনা উল্লেখযোগ্য, প্রায় ১২০০ জন যাত্রী আহত এবং ২৯৬ জন নিহত হন এই দুর্ঘটনায়।
যেখানে ভারতবর্ষের মতো একটি জনবহুল দেশে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের জন্য প্রধান যাতায়াত ব্যবস্থা রেল। সেখানে দিনের পর দিন ক্রমশ রেল দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠছে সাধারণ মানুষের জীবনের। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর রেলওয়ে ডিপার্টমেন্ট বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে সতর্কতার প্রতিশ্রুতি দেয় সাধারণ মানুষকে। সরকার অনুদান দিয়ে ক্ষান্ত করেন মৃত ব্যক্তির পরিবারকে। কিন্তু এতে কাজের কাজ কি হচ্ছে? প্রশ্ন এখন এটাই। মানুষকে শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি না দিয়ে আরো দায়িত্বশীলতার সাথে ভারতীয় রেল মানুষকে নিজস্ব গন্তব্যে পৌঁছে দিতে সক্ষম হলেই হয়তো ভারতীয় রেল ব্যবস্থার সাথে সাথে সারা দেশের উন্নতি ঘটবে। সাধারণ মানুষকে হারাতে হবে না আপনজনকে, বাঁচবে দেশের সাধারণ পরিবার।