
ওঙ্কার ডেস্ক : পশ্চিম এশিয়ায় আবারও যুদ্ধের কালো ছায়া। বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবার ভোররাতে ফের হামলা চালাল ইজরায়েল। এবার ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ চালিয়ে তেহরান-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ধ্বংসাত্মক আঘাত হেনেছে ইজরায়েলি বাহিনী। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সূত্রের খবর, ইরানের চারজন শীর্ষ সেনাকর্তা ও ছ’জন পরমাণু বিজ্ঞানী এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন। ধ্বংস হয়েছে একাধিক পারমাণবিক কেন্দ্রও। তার জবাবে শনিবার ভোর রাতে ইরান ১০০-র বেশি ক্ষেপনাস্ত্র চালায় ইজরায়েল উপর। ইজরাইলের আকাশ নিরাপত্তা সুকাঠামো হওয়ায় তেমন ক্ষতি করতে পারেনি এই ক্ষেপনাস্ত্র, এমন টাই জানাচ্ছে ইজরায়েল সরকার। এই হামলার কিছুক্ষণে পরই তেহরান আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বিস্ফোরণ হয় বলে খবর। হামলা চালায় ইজরায়েল। অবশ্য শুক্রবার ইজরায়েলি হামলের পর থেকেই বন্ধ ছিল বিমানবন্দরটি শুক্রবার হামলার পর নেতানিয়াহু সরকারি ভাবে জানান, “ইরান গোপনে ইউরেনিয়াম জমা করে পরমাণু বোমা তৈরি করে তা জঙ্গিদের হাতে তুলে দেওয়ার ছক করছিল। আগামী কিছু মাসের মধ্যেই পারমানবিক বোমার হামলা চালাতে পারে ইজরায়িলের উপর। আত্মরক্ষার তাগিতেই সেই পরিকল্পনাকে রুখতেই এই হামলা”। ইজরায়লি সরকার বরাবর ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রের উপর হামলা চালাতে চেয়েছিল। ইরানের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা শক্তিশালী না হওয়ায় এই সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে ইজরাইয়েল এই হামালা করেছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক মহলের অনেকে।
এই হামলার পরই ইরানের পাশে না দাঁড়িয়ে, বরং ইজরায়েলের হামলাকে প্রকাশ্যে সমর্থন করলেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া বার্তায় ট্রাম্প লিখেছেন, “ইরান যদি পরমাণু বোমা তৈরি করে, তাহলে তারা আরও ভয়ঙ্কর হামলার মুখে পড়বে। আমি তাদের বহুবার সুযোগ দিয়েছি”। ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর কূটনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। কারণ শুরুতে হোয়াইট হাউস দুই পক্ষকে সংযত থাকার বার্তা দিয়েছিল। কিন্তু তেহরানের উপর হামলা চালানো যুদ্ধ বিমানগুলি F-35, F-15 ও F-16 সবকটি আমেরিকার। ইজরায়লি অফিসিয়াল কত্বৃক সোস্যাল মিডিয়ায় পোষ্ট করা ভিডিওতে তা ষ্পষ্ট। তবে বিশ্লেষকদের মতে, আগামী রবিবার ওমানে ইরান-মার্কিন পরমাণু আলোচনার আগেই এই চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে ওয়াশিংটন।
অন্যদিকে, ইরান ষ্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ইজরায়েলি হামলার উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। তেহরানের দাবি, তারা ‘নিউক্লিয়ার নন-প্রলিফারেশন’ চুক্তির সদস্য এবং সেই চুক্তি মেনেই ইউরেনিয়ামের বিশুদ্ধতা ৬০ শতাংশে আনা হয়েছে। ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, রবিবারের পরমাণু বৈঠক ব্যর্থ হলে পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলিতে আঘাত করতে পারে তারা।
এর মধ্যেই ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইজরায়েলি হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি আগে থেকেই জানতেন। তেহরানের কাছে এখন একটাই পথ খোলা—পরমাণু কর্মসূচি বাতিল করা। না হলে ইরানকে “ধ্বংসস্তূপে” পরিণত করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন তিনি।
এই পরিস্থিতিতে চিন, রাশিয়ার বিরোধিতা সত্ত্বেও রাষ্ট্রসঙ্ঘের পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রস্তাবে সমর্থন করেছে আমেরিকা, ব্রিটেন সহ একাধিক পশ্চিমী দেশ। ফলে ইরানকে চূড়ান্তভাবে কোণঠাসা করে তুলেছে আন্তর্জাতিক মহল। সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে বড়সড় সংঘাতের আশঙ্কা ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। ওমানে রবিবারের বৈঠকের উপর নজর আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহলের।