
ওঙ্কার বাংলা অনলাইন ডেস্কঃ অবশেষে গ্রেফতার সোনারপুরের ত্রাস তৃণমূল নেতা জামাল সর্দার। কলকাতার লেদার কমপ্লেক্স থেকে শনিবার সকালে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নারী নির্যাতন সহ সোনারপুরে নিজের প্রসাদোপম বাড়িতে বিচারসভা বসিয়ে উল্টো করে ঝুলিয়ে, শিকলে বেঁধে মারধর থেকে আর্থিক প্রতারণা সহ একাধিক অভিযোগে তাকে খুঁজছিল পুলিশ। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে নতুন সিম কার্ড নিয়েও শেষ রক্ষা হলো না। অবশেষে ধরা পরল সোনারপুর কান্ডের মূল অভিযুক্ত জামাল উদ্দিন সরদার। মাস্ক পরে থাকায় কাল হল জামালের ৷ তাতেই পুলিশের সন্দেহ হওয়ায় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷ বাসন্তী হাইওয়ে থেকে সোনারপুর আসার রাস্তায় তাকে গ্রেফতার করা হয় ৷ মঙ্গলবার ১৬ই জুলাই গ্রেফতারির আশঙ্কায় দুপুরেই বাড়ি ছাড়ে জামাল ৷ সন্ধের দিকে পাঁচিল টপকে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় জামালের স্ত্রী ও ছেলে ৷ ঐদিন ঘুটিয়ারি শরিফ এলাকায় শ্বশুরবাড়ির কাছে কোথাও থাকার পরিকল্পনা থাকলেও পুলিশের ঘোরাঘুরির কারণে জঙ্গলের মধ্যে রাত কাটায় জামাল ৷ দিনের আলো ফুটতেই মাস্ক মুখে দিয়ে ঘুটিয়ারি ষ্টেশন থেকে ট্রেন ধরে সোনারপুরের উপর দিয়েই বিধাননগর ষ্টেশনে নেমে বিধাননগর কমিশনারেট এলাকায় এক পরিচিতের কাছে যায় সে ৷ সেদিনটা ওখানেই কাটায় ৷ এরইমধ্যে সংবাদমাধ্যমে তার খবর সম্প্রচার হওয়া দেখে মত পরিবর্তন করে সে ৷ আত্মসমর্পনের কথাও ভেবেছিল জামাল ৷ এইকারণে বৄহস্পতিবার সোনারপুর থানার কাছাকাছি মিলনপল্লী এলাকায় সে চলেও আসে ৷ কিন্তু তার আইনজীবি তাকে আত্মসমর্পনের বিষয়ে মানা করলে ফের এলাকা ছাড়ে জামাল ৷ এরইমধ্যে নিজের ফোন পরিবর্তন করে নেয়, নতুন সিম নেয় ৷ স্ত্রী ও সন্তানের জন্য চিন্তা হচ্ছিল তার ৷ তাদের কোথাও একটা নিরাপদ আশ্রয়ে রাখার পরিকল্পনা করে সে ৷ এইকারণে শাশুড়িকে ফোন করে নিজের বিপদ বাড়ায় জামাল ৷ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার শালাকে তুলে আনে সোনারপুর থানার পুলিশ ৷ নিজের কাছের লোককেও আর বিশ্বাস করতে পারছিল না জামাল ৷ বৄহস্পতিবার রাতে ডানকুনি এলাকায় এক পরিচিতের বাড়িতে থাকে ৷ শুক্রবার স্ত্রী ও সন্তানকে সেভ জোনে রাখার ব্যবস্থা করে ৷ তারপর আগামী ৬ মাসের জন্য সে আত্মগোপন করার পরিকল্পনা করে ফেলে ৷ যদিও শেষ রক্ষা হয়নি ৷ সাতটার দিকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷
জামালকে গ্রেফতার করতে পুলিশের একাধিক টিম তৈরি করা হয়েছিল ৷ সোনারপুর থানার আইসি আশিস দাসের নেতৄত্বে একটি টিম শুক্রবার সারাদিন নানান জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালায় ৷ তারাই শেষ পর্যন্ত জামালকে গ্রেফতার করে ৷ অন্যদিকে সোনারপুর থানার পিসি পার্টির একটি টিম ও বারুইপুর পুলিশ জেলার স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের আরও একটি টিম দিনভর তল্লাশি অভিযান চালায় ৷ জামালের গ্রেফতারির পর বারুইপুর পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার পলাশ চন্দ্র ঢালি জানান তারা জামালকে নিজেদের হেফাজতে নেবেন৷
শনিবার দুপুর পৌনে বারোটা নাগাদ সোনারপুর থানা থেকে জামালকে নিয়ে যাওয়া হয় বারুইপুর মহকুমা আদালতে। এদিন থানা থেকে বেরিয়ে প্রিজন ভ্যানে ওঠার সময় জামাল জানান যারা তার বিরুদ্ধে সংবাদ মাধ্যমে ইন্টারভিউ দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেছেন তিনি। যারা এই অভিযোগ করেছেন তারা সকলেই সরকারি জমি দখল করে বসে আছেন। সমীর নস্কর নামে এক ব্যক্তি চক্রান্ত করে তাকে ফাঁসিয়েছে বলে অভিযোগ জামালের।এদিন সোনারপুর থানার পুলিশ ১৪ দিনের জেল হেফাজত চেয়ে তাকে বারুইপুর মহকুমা আদালতে তুলছে।
প্রসঙ্গত সোনারপুরের প্রসাদপোম বাড়ির সুইমিংপুলে বেআইনিভাবে কচ্ছপ পোষার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। জামাল সর্দারের বাড়ির দরজা বন্ধ থাকায় বৃহস্পতিবার কচ্ছপ উদ্ধার করতে এসে ফিরে যেতে হয় বন দফতর ও পুলিশ আধিকারিকদের। সেই অভিযোগও রয়েছে জামালের বিরুদ্ধে। প্রসঙ্গত সোনারপুরের জামাল রাজা বাদশার মত জীবন যাপন করলেও, মা ভাইরা দিন কাটান কুঁড়েঘরে।