
বাবলু প্রামাণিক, জয়নগর: অল্পেতে খুশি হবে দামোদর শেঠ কি।মুড়কির মোয়া চাই, চাই ভাজা ভেটকি। মুড়কির মোয়া নয়, এখন সময় ঐতিহ্যপূর্ণ জয়নগরের মোয়ার। রসিক বাঙালির শীতের আমেজ ও আবেগের সাথে জড়িত রয়েছে জয়নগরের মোয়া। খাদ্যরসিক বাঙালির শীতের প্রিয় খাদ্যের তালিকায় যদি পিঠে, পুলি,পাটিসাপটা, নলেনগুড়ের রসগোল্লা না থাকে তাহলে পেট পূজো অসম্পূর্ণ, আর সঙ্গে যদি খাওয়ার শেষে থাকে জয়নগরের মোয়া তাহলে তো সোনায় সোহাগা। তবে এই মোয়ার জন্মস্থান নিয়ে রয়েছে বহুদিন ধরেই বিতর্ক। মোয়া মানেই বাঙালি বোঝে জয়নগর। কিন্তু সত্যি কি তাই? আসুন ইতিহাসের পাতায় একটু চোখ বুলানো যাক।
মোয়ার নামের আগে জয়নগরের নাম জড়িয়ে থাকলেও এর আসল জন্মভুমি ‘বহরু’ নামক গ্রাম থেকে।এই বহরু গ্রামের উল্লেখ আমরা রায়মঙ্গল কাব্যেও পেয়ে থাকি। এই গ্রামকে ঘিরেই রয়েছে বহু জনপ্রিয় মানুষের শৈশবের টুকরো টুকরো স্মৃতিচারণ। এই গ্রামেরই এক ব্যক্তি যামিনী বুড়ো বিখ্যাত এই মোয়ার জন্মদাতা হিসেবে পরিচিত।লোকমুখে শোনা যায়, তিনি নিজের জমিতে কনকচূড় ধান ফলান। পরে সেই ধানের খই ও নলেন গুড় দিয়ে মোয়া তৈরি করে কোনও এক অনুষ্ঠানে তা পরিবেশন করেন। সেই অনুষ্ঠানেই খোদ হাজির ছিলেন শ্রীচৈতন্যদেব। তিনি মোয়ার খুব সুখ্যাতি করেন। এরপরই লোকমুখে জনপ্রিয়তা লাভ করে বহরু মোয়া যা এখনের জয়নগরের মোয়া নামেই পরিচিত। বীণাপাণি মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের বর্তমান মালিক গণেশ দাস জানান তাদের বিশেষ জিরেন কাঠের নলেন গুড়ের মোয়া সম্পর্কে যা বিশ্ব বিখ্যাত।
ময়রারা কাজ করেন শুধুমাত্র এই চার মাস বাকি সময়ে থাকেন শুধু শীতের অপেক্ষায়। চার মাসের ব্যাবসার পুঁজিই তাদের সারা বছরের সম্বল।
মোয়া আর ভোজন রসিক বাঙালির এই মেলবন্ধন চিরকালের। তাই মাঘের শীত বাঘের গায়ে পড়ুক আর না পড়ুক আপামোর বাঙালির পাতে জয়নগরের মোয়া বাধ্যতামূলক।