
ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী, কলকাতা: মাসের ১৫ তারিখ পেরিয়ে গেলেও ট্রাম না চালু হওয়ায় গত ২৫শে অক্টোবর পরিবহন ভবন অভিযান করার ডাক দেয়। ‘ক্যালকাটা ট্রাম ইউজারস অ্যাসোসিয়েশন’ এবং ‘সেভ হেরিটেজ সেভ ট্রাম’ নামক সংগঠন। কিন্তু পরিবহন মন্ত্রীর মত বদলে এবং কলকাতার দুটি রুটে ট্রাম পরিষেবা পুনরায় চালু হওয়ায় তারা এই কর্মসূচি বাতিল করে।
২৭শে অক্টোবর রবিবার রাজাবাজার ট্রাম দিবস সামনে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে এই দুই সংগঠন। দাবিড় শহরবাসীকে ট্রাম পরিষেবা ফিরিয়ে দিতে হবে। শুধু ৫নং এবং ২৫ নং রুট নয়, এছাড়াও ‘সুস্থ সবল’ রুট গুলিতেও ট্রাম চালাতে হবে। এর অন্যথা হলে বা ট্রাম বন্ধ করার কোনও রকম পরিকল্পনা থাকলে তারা রাজ্য সরকারকে ‘বৃহত্তর আন্দোলনে’ নামার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
এই দিন এই সভায় মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ট্রাম ইঞ্জিনিয়ার শুভাশিস রায়, সাহিত্যকর্মী সায়ন ভট্টাচার্য, ট্রাম কর্মচারী বিনয় সিং, পরিবেশকর্মী সৌরভ চক্রবর্তী, জুনিয়র ডাক্তার রৌনক বিশ্বাস এবং সেভ হেরিটেজ সেভ ট্রাম সংগঠনের সম্পাদক আকাশ পাইন। অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন ক্যালকাটা ট্রাম ইউজারস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য দীপ দাস, ট্রাম প্রেমী ইকবাল আহমেদ, ক্যালকাটা ট্রাম ইউজারস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য স্বর্ণাভ মুখার্জি, ট্রাম কর্মচারী গোপাল রাম, ব্যবসায়িক পার্থ দত্ত, স্কুল ছাত্র অঙ্কন কুমার মাল।
সেভ হেরিটেজ সেভ ট্রাম সংগঠনের সভাপতি কৌশিক দাস জানিয়েছেন, “আমাদের আজকের জনসভার মূল দাবি শুধু ৫ এবং ২৫ এই দুটি রুট নয় সুস্থ সবল বাকি রুট গুলি থেকেও ট্রামকে চালাতে হবে। জয় রাইড বলে সরকার যেটি চালাতে চাইছে এসপ্ল্যানেড থেকে ময়দান রূটটিতে এবং এছাড়া আর কোথাও ট্রাম চলবে না, এই বিষয়টির আমরা ঘোর বিরোধিতা করছি। আমরা সেটা চাই না আমরা চাই ট্রাম একটি গণপরিবহন রূপে ট্রাম চলবে কলকাতার বুকে।”
কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, “একটি সংবাদ মাধ্যমে আমাদের কলকাতার মেয়র মহাশয় তিনি বলেছেন যে কোর্টের রায় বেরোনো সঙ্গে সঙ্গেই তিনি CTC দ্বারা ট্রাম লাইন গুলিকে কলকাতার বুক থেকে উপরে ফেলবেন। উনি কলকাতার বাসিন্দাদের ট্রাম পরিষেবা থেকে বঞ্চিত করতে চাইছেন সেটি কলকাতার বাসিন্দারা মেনে নেবেন না।”
শহরে ট্রাম পরিষেবার অবস্থা নিয়ে তিনি বলেছেন, “রাজাবাজার ট্রাম ডিপোর ভেতরে অসংখ্য ট্রাম্প ভগ্নদশা অবস্থায় পড়ে রয়েছে, কোনও মেনটেনেন্স করা হচ্ছে না, ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রামগুলিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ২০১৮ সালের পর থেকে সরকার একটি কানাকড়িও ট্রামের উন্নতির পিছনে খরচ করেনি। অফুরন্ত ট্রাম ডিপোর ভেতর থেকে ট্রামের বিভিন্ন পার্টস যেমন তার, কন্ট্রোলার ইত্যাদি পার্টস চুরি যাচ্ছে। আমাদের সংগঠনের নেতৃত্বরা যখন ডিপোর ভেতরে প্রবেশ করতে যাই তখন সেখানে কর্মরত এক ব্যক্তি আমাদেরকে বলেন যে ‘আউটসাইডের লোক এখানে অ্যালাও নয়’। আমরা যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করি যে ট্রাম ডিপোর ভেতর থেকে ট্রামের পার্টস গুলো চুরি যাচ্ছে কী করে? তখন কি আউটসাইডের লোকেরা চুরি করছে নাকি ইনসাইডের লোকেরা চুরি করছে? তখন তিনি সম্পূর্ণ কথাটি এড়িয়ে যান এবং কোন উত্তর আমাদেরকে দেন না।”
শেষে কৌশিক বলেছেন, “এটা থেকে স্পষ্ট যে একটি পরিকল্পনা মাফিক ট্রাম কে বন্ধ করার একটা চক্রান্ত চলছে। আমরা পরিবহন দপ্তর এবং আমাদের কলকাতা কর্পোরেশন কে জানাতে চাই যে, কোনভাবে যদি কলকাতার বুক থেকে ট্রাম কে বন্ধ করার কথা তারা ভাবেন তাহলে আমরা আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবো।”