
নিজেস্ব প্রতিনিধি, কলকাতাঃ প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ৮০ বছর বয়সে পাম অ্যাভিনিউর বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রয়াণে তাঁর দীর্ঘ ৫ দশকের রাজনৈতিক জীবনের অবসান হল। বৃহস্পতিবার, তাঁর দেহ রাখা থাকবে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য। নিজের দেহ দান করে গিয়েছিলেন প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী । সেই মতো শুক্রবার তার দেহ এন আর এস মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হবে, বলে জানমিয়েছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
১৯৪৪ সালের ১ মার্চ কলকাতায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জন্ম হয়। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভ্রাতুষ্পুত্র তিনি। শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয় থেকে স্কুল জীবন শেষ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন। এরপর দমদমে একটি সরকারি স্কুলেই শিক্ষকতা শুরু করেন। আজীবন বামপন্থায় বিশ্বাসী ছিলেন বুদ্ধদেব।রাজনীতিতে প্রথমে কাশীপুর-বেলগাছিয়া কেন্দ্র থেকে বিধায়ক ছিলেন। এরপর ১৯৮৭ সালে যাদবপুর কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়ান। ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা এই কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন বুদ্ধবাবু। ২০০১ সালে জ্যোতি বসু রাজনীতি থেকে অবসর নিলে তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হন।
রাজনীতি আঙিনার উজ্জ্বল নক্ষত্র বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে তাঁর পাম অ্যাভিনিউর বাড়িতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা জানিয়েছেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শেষযাত্রায় সমস্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে সহযোগিতা করবে রাজ্য সরকার। সরকারি ছুটির ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকলেও সংস্কৃতি জগতেরও উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক সাহিত্য থেকে সিনেমা, সবকিছুতেই গভীর অনুরাগ ছিল তাঁর।
ছাত্রজীবন থেকেই সংস্কৃতি চর্চা শুরু করেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বই পড়ার পাশাপাশি লেখালেখিও করেছেন তিনি। নিজের পড়ার টেবিলে রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শনগুলি সর্বদা সঙ্গী ছিল তাঁর। শুধু বই পড়া বা লেখালেখি নয় সিনেমা-নাটকেও একইভাবে নিমজ্জিত থাকতেন তিনি। রাজনৈতিক জীবনে ব্যস্ত থাকলেও শুধুমাত্র সভা-সমিতির ভিড়ে আটকে থাকেননি বুদ্ধদেব।
১৯৯৩ সালে প্রকাশিত ‘দুঃসময়’ নামে এক নাটকের নাট্যকার ছিলেন তিনি। সেই প্রথম লেখালেখির জগতে সাড়া ফেলেন তিনি। এমনকি ‘মেটামরফোসিস’ অবলম্বনে ‘পোকা’র মতো নাটকও লিখেছিলেন তিনি। অনুবাদ করেছিলেন মার্কেজের উপন্যাস। মানিক বন্দোপাধ্যায়কে নিয়ে ‘পুড়ে যায় জীবন নশ্বর’র মতো নন ফিকশনও লিখেছেন তিনি। তবে ‘স্বর্গের নিচে মহাবিশৃঙ্খলা’ বইটি তাঁর সবচেয়ে আলোড়ন ফেলা বই ।