
সুমন গঙ্গোপাধ্যায়, কলকাতাঃ একদিকে বাসের অভাব অপরদিকে লোকসানের ভয়, বন্ধ একাধিক রুট, স্বাভাবিকভাবেই সমস্যা তে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। এবার এই সমস্যা সমাধান করতে একটু নতুন ‘পাইলট প্রজেক্ট ‘ নিতে চলেছে রাজ্য পরিবহণ দফতর।
রাজ্যে এই মুহূর্তে প্রায় ২০০ কাছাকাছি ছোট-বড় রুট বন্ধ। পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, এর মূল কারণ বাসের অভাব, আর আবশ্যই লোকসানের ভয়। আর এই লোকসানের অন্যতম কারণ পরিবহণ দফতরের এক শ্রেণীর কর্মচারীদের ‘দুর্নীতি’। তবে এবার সেই ব্যবস্থা বদল করে ‘এক ঢিলে দুই পাখি ‘ মারতে চাইছে পরিবহণ দফতর।
পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তী’র বক্তব্য,” আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর বর্তমানে আমদের দফতরের বিভিন্ন কর্পোরেশন এর বাসের সংখ্যা রিভিউ করি, তাতে দেখা যায় প্রায় ৫০০ মতো বাস শুধুমাত্র অব্যবহার আর রক্ষণাবেক্ষণ এর কারণে ডিপো গুলোতে পরে নষ্ট হচ্ছে, অথচ প্রয়োজনের তুলনায় বাস রাস্তায় নেই। তখন ঠিক করি এই সিস্টেম বদল করতে হবে।” এই ‘পাইলট প্রজেক্ট’ এর প্রথম ধাপ হিসাবে দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন ডিপো তে থাকা বাস গুলোর বর্তমান অবস্থা যাচাই করে সেগুলো কে তিনটি ক্যাটাগরি তে ভাগ করা হয়।
কি সেই ক্যাটাগরি? স্নেহাশীষ চক্রবর্তী জানান ” যে বাস গুলি একদমই ব্যবহার যোগ্য নয় তার তালিকা প্রথমে করি, যে বাস গুলো অল্প মেরামত করলে রাস্তায় নামানো যাবে তার তালিকা এবং যে গুলো মেরামতির জন্যে অনেক সময় লাগবে তার তালিকা করতে বলা হয়, এবং সেই মতো বাজেট তৈরি করি। ”
এই ‘ মেডিক্যাল টেস্ট ‘ এর ফলে প্রথমেই ১০০ টি বাসকে সম্পূর্ণ বাতিল করে দেওয়া হয়। বাকী বাস গুলোকে মেরামত করা হয়। পরিবহণ মন্ত্রীর দাবি,” আমরা ৪০০ বাস এর পাশাপাশি নতুন করে আরও ২৬৫ টি বাস কিনি। সব মিলিয়ে হাতে আরও নতুন ৬৬৫ টি বাস রাস্তায় নামার জন্যে তৈরী করি।”
এই ৪০০ বাসের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ১০০ বাস কে নতুন করে রাস্তায় নামানো হয়, তবে সমস্যা শুরু হয় এখানেই, মন্ত্রীর মতে, ” প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায়, ২০০০- ৩০০০ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই নতুন ৬৬৫ আমরা আর নিজেরা চালাবো না।”
আর এই সমস্যা সমাধানে এবার পিপিপি মডেলে এই ৬৬৫ টি বাস চালাবে পরিবহণ দফতর। ঠিক হয়েছে, এই সরকারি বাস গুলো চাইলে যে কোনো ব্যক্তি বা সমবায় নিতে পারবে, তার জন্যে সেই মালিক বাস প্রতি ১০০০০ টাকা করে পরিবহণ দফতরকে ভাড়া বাবদ দেবে। মন্ত্রীর বক্তব্য,” তেল, থেকে শুরু করে ড্রাইভার, কন্ডাক্টর সবই বহণ করতে হবে ওই মালিককেই। তারা সরকারী কর্পোরেশন এর নাম ব্যবহার করতে পারবে। এর ফ লে সরকারকে আর নতুন করে কোনও অর্থ দিতে হবে না, লোকসানের ও ভয় থাকবে না, উল্টে সরকারের তহবিলে টাকাও আসবে আমাদের আর লোকসানের ভার বহন করতে হবে না ।”
প্রাথমিকভাবে উত্তরবঙ্গে, উত্তরবঙ্গ রাজ্য পরিবহণ নিগমের মাধ্যমে জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে এই পিপিপি মডেলের সরকারী বাস দেওয়া হবে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই এই সংক্রান্ত টেন্ডার প্রকাশ করবে পরিবহণ দফতর।
পরিবহণ মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, ” তবে আমাদের যে বাড়তি ড্রাইভার বা কন্ডাক্টর আছেন তাদের আমরা দফতরের অন্য কাজে ব্যবহার করব। আমাদের আরও একটা লক্ষ থাকবে এই পিপিপি মডেলের মাধ্যমে বন্ধ হয়ে যাওয়া রুট গুলো ফের চালু করা।”