
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা : দুর্নীতির জাল ছড়াতে অর্পিতার মতো একাধিক ব্যক্তিকে শিখণ্ডী করেছেন প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা হাইকোর্টে এমনটাই দাবি করলো তদন্তকারী সংস্থা ইডি। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে জেলবন্দী পার্থর জামিনের আবেদনের বিরোধিতায় ইডি জানায়, অর্পিতা মুখোপাধ্যায় সহ একাধিক ব্যক্তিকে দুর্নীতি সংগঠিত করতে ব্যবহার করেছেন পার্থ। ইডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি বলেন, শিশু দত্তক নেওয়ার জন্য অর্পিতা কে ছাড়পত্র দিয়েছিলেন পার্থ। তিনি বলেছিলেন যে অর্পিতার কিছু হলে শিশুটির দ্বায়িত্ব তিনি নেবেন। সেটা ছেলেই হোক আর মেয়েই হোক। এরপর ঘনিষ্ঠ পারিবারিক বন্ধু থেকে কাকুতে পরিণত হয়েছিলেন পার্থ।
পার্থ নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করত অর্পিতা। গোয়া এবং থাইল্যান্ডে অর্পিতার সঙ্গে স্নেহময় দত্তকে পাঠিয়েছিলেন পার্থ। স্নেহময়ের বক্তব্য পেশ করে ইডি বলে, এই দুজনের মধ্যে কি সম্পর্ক ছিল আমি জানি না, কিন্তু স্নেহময় দত্তর বক্তব্য পুরোটাই আদালতের সামনে রাখলাম। এখান থেকেই তাদের মধ্যে কি সম্পর্ক ছিল সেটা স্পষ্ট হয়। ইডি বলে, অর্পিতা বলেছিলেন যে পার্থ এই দুর্নীতির কিংপিন। আমরা বলছি অর্পিতা প্রকৃতপক্ষে এই দুর্নীতির রানী। স্বাধীন ভারতবর্ষের ইতিহাসে এটা প্রথম হয়েছে যে ৫৪ কোটি টাকার জন্য দুজন নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে আর দুজনেই বলছে এটা আমার নয়, অপরজনের। ইডি আরও বলে, পিংলার একটি স্কুল প্রতীকীভাবে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। স্কুলটি একটি ট্রাস্টের নামে আছে, অনেক ডিরেক্টর আছে। কেউ এই বাজেয়াপ্ত করার বিরুদ্ধে মামলা করেনি। একমাত্র পার্থ করেছেন। যদি তার সম্পত্তি না হয়, তাহলে তিনি মামলা করলেন কেন। এই স্কুলের অন্যতম ডিরেক্টর হলেন কৃষ্ণচন্দ্র অধিকারী, রীনা রানী অধিকারী। এরা কে, এরা হলেন পার্থর জামাই কল্যাণময় ভট্টাচার্যর কাকা – কাকিমা। কল্যাণময় ভট্টাচার্যর বয়ান থেকে স্পষ্ট হয় যে কিভাবে এই স্কুলের জমি কেনা হয়েছিল এবং স্কুল বানানোর জন্য নগদ প্রায় ১৫ কোটি টাকা কোথা থেকে এসেছিল। পার্থ চট্টোপাধ্যায় এই ১৫ কোটি টাকা দিয়েছিলেন। আইনজীবী এডুলজি আদালতে আরো বলেন, কৃষ্ণচন্দ্র অধিকারীর আগের যে সম্পত্তি ছিল সেগুলি আমরা বাজেয়াপ্ত করিনি। কিন্তু যে ব্যক্তির কাছে ৩০ হাজার টাকা ছিল তিনি কিভাবে কোটি টাকার সম্পত্তি কেনেন। রাঁধুনি এবং ড্রাইভারকে পর্যন্ত তার বিভিন্ন সংস্থা চালাবার জন্য ব্যবহার করেছেন পার্থ। সমস্ত সংস্থার নিয়ন্ত্রণ পার্থর হাতেই ছিল। অর্পিতার এক আত্মীয়কে ড্রাইভার থেকে একটি সংস্থার ডিরেক্টর করা হয়েছিল। এই ধরনের গরীব মানুষদের ব্যবহার করেছেন পার্থ। বোলপুরের সম্পত্তি যৌথভাবে কিনেছিলেন পার্থ – অর্পিতা।
এরপর বিচারপতি জানতে চান, এই মামলায় কতজন সাক্ষী আছে। ইডি জানায় ১৬৫ জন। তাহলে অদূর ভবিষ্যতে নিম্ন আদালতে বিচারপর্ব শেষ হওয়ার কোন সম্ভবনা নেই বলে মন্তব্য করেন বিচারপতির তীর্থঙ্কর ঘোষ। ইডি জানায়, আমরা বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করতে প্রস্তুত রয়েছি। হাইকোর্ট নির্দেশ দিলে প্রত্যেকদিন নিম্ন আদালতে শুনানি করতে প্রস্তুত। ফের ৬ মার্চ এই আবেদনের পরবর্তী শুনানি হবে।