
ওঙ্কার ডেস্ক : ইরানের ইতিহাসে যার নাম চর্চার কেন্দ্র, সেই আয়াতোল্লা রুহোল্লাহ খোমেইনির শিকড় রয়েছে ভারতের মাটিতে। যিনি ১৯৭৯ সালে শাহ রাজবংশকে উৎখাত করে ইরানকে একটি ধর্মতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করেছিলেন, তাঁর পারিবারিক ইতিহাসের একটি অধ্যায় শুরু হয়েছিল ভারতের উত্তরপ্রদেশে, বারাবাঁকি জেলার এক গ্রামে।
ভারতের সঙ্গে ইরানের ইতিহাসের একটি অজানা যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায় আয়াতোল্লা খোমেইনির পারিবারিক শিকড়ে। উত্তরপ্রদেশের বারাবাঁকি জেলার কাছে এক গ্রামে জন্মেছিলেন খোমেইনির দাদু আহমদ হিন্দি। আহমদ হিন্দির পিতা দিন আলি শাহ ১৭০০ শতকের দিকে ইরান থেকে ভারতে এসে বসবাস শুরু করেন। ধর্মীয় শিক্ষা লাভের আকাঙ্ক্ষায় আহমদ ১৮৩০ সালে ভারত ছেড়ে যান ইরাকের নাজাফে, পরে বসতি গড়েন ইরানের খোমেইন শহরে। এই শহর থেকেই শুরু হয় এক নতুন ইতিহাসের সূচনা। খোমেইনি নিজের দাদুর স্মৃতি সম্পর্কে বলেন, “দাদুর আত্মত্যাগ ও বিশ্বাস আমার চিন্তাকে গড়ে তুলেছে।” আহমদ হিন্দি তাঁর নামের সঙ্গে ভারতীয় শিকড়ের স্মৃতি হিসেবে যুক্ত রেখেছিলেন ‘হিন্দি’ উপাধি, আর তাঁর কবর এখনো রয়েছে কারবালার মাটিতে।
রুহোল্লাহ খোমেইনি ১৯০২ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন আধুনিক ইরানের সবচেয়ে প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা। তাঁর নেতৃত্বে ঘটে যায় ঐতিহাসিক ইসলামি বিপ্লব। সেই বিপ্লবই শুধু ইরানের রাজনীতি নয়, গোটা পশ্চিম এশিয়ার ভূরাজনীতির ছক বদলে দেয়।
বর্তমানে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনির পর কে আসবেন, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। খোমেইনি নিজে বংশানুক্রমিক উত্তরাধিকারের বিরোধী ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ইসলামে নেতৃত্ব বংশের মাধ্যমে নয়, যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্ধারিত হওয়া উচিত।তাঁর সেই নীতি এখনও ইরানের শাসনব্যবস্থায় এক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।
ভারতের মাটিতে জন্ম নেওয়া ও তাঁর উত্তরসূরির হাত ধরে বদলে গিয়েছিল একটি গোটা রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ। উত্তরপ্রদেশের সেই গ্রাম বারাবাঁকি হয়তো আজও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু নয়, কিন্তু ইতিহাসে তার ছাপ রয়েছে গভীরভাবে একটি বিপ্লবের।