
কুশল চক্রবর্তী
ভারতের রেলওয়ে নিয়ে গর্ব করার মত কিছু কথা অবশ্যই আছে। বিশ্বের চতুর্থ বড় নেট ওয়ার্ক। অসংখ লোকের জীবন জীবিকার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে এই রেল। রেলকে আরও বেশি সাধারণ মানুষের উপযোগী করে তোলার চেষ্টা, বলতে গেলে সব সরকারই করেছে। না হলে, ১৯৬৯ সালে রাজধানী এক্সপ্রেসের মত ট্রেন আসত কি ? রাজধানী এক্সপ্রেস তৎকালীন ট্রেন পরিষেবার জগতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিল। তার গতি, তার যাত্রী স্বছন্দ, সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। আজও ভারতীয় রেলের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ট্রেন রাজধানী এক্সপ্রেসকেই বলা যেতে পারে।
২০১৪ সালের পর থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারও চেষ্টা করেছিল ট্রেন বাবস্থার কিছু উন্নতি সাধনে।তার ফলস্বরূপ ভারতীয় রেলে চালু হয় মধ্যম গতির বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পতাকা তুলে যাত্রা শুরু করান নিউ দিল্লী থেকে বারানসি যাওয়া প্রথম বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের।বিগত পাঁচ বছরে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালু হয়েছে ভারাতের নানা প্রান্তে।এখন ৬৬টি রুটে চলেছে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। গ্রাহক পরিষেবা ও অন্যান্য সুখ সুবিধার উন্নয়নে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে ট্রেনটা। ফলে এই ট্রেনের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে আম জনতার।
এমনই এক সাধারণ মানুষ মধ্যপ্রদেশের চন্দ্র শেখর গৌড়। তিনি উৎসাহী হয়ে রেলের কাছে আর টি আই করে জানতে চেয়েছিলেন যে, এই যে এত সুন্দর বন্দে ভারত এক্সপ্রেস, এর আয় ব্যয়ের হিসাবটা কি। এর উত্তরে রেল দপ্তর বলেছে আমাদের একক ট্রেনের আলাদা ভাবে কোন হিসাব থাকে না। কথাটা অবাক করেছে ট্রেন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মানুষকে। কারণ রেলের তথ্য অনুসন্ধান করলে সহজেই জানতে পারা যাবে যে রাজধানী এক্সপ্রেসের কোন ট্রেনটি কত আয় করে। যেমন ভারতের এক নম্বর আয় করা রাজধানী এক্সপ্রেসের নাম হচ্ছে কে এস আর বাঙ্গালুরু থেকে নিউ দিল্লী চলা রাজধানী এক্সপ্রেস।২০২২-২৩ সালে এই ট্রেন আয় করেছে ১৭৬ কোটি টাকার বেশি। তারপরই আছে শিয়ালদহ থেকে নিউ দিল্লী যাওয়া রাজধানি এক্সপ্রেস। যার আয় কিনা ১২৮ কোটি টাকার উপরে।এই গত নভেম্বর মাসে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে, প্রয়াগরাজ থেকে নিউ দিল্লী যাওয়া প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস ৬.৬ কোটি টাকা রোজগার করে। এই হিসেব ছাড়িয়ে গেছে অন্যান্য নামকরা ট্রেন- বন্দে ভারত এক্সপ্রেস, তেজাস এক্সপ্রেস,শতাব্দী এক্সপ্রেসের রোজগারকে।তহলে এটা বোঝা যাচ্ছে কিছু কিছু ট্রেনের আয় বায়ের হিসাব রাখা হয়। আর এই কম্পিউটার এর জমানায় এটা এমন কোন বাপারই নয়।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, ট্রেনের টিকিটের জন্য সরকারকে ৫৬৯৯৩ কোটি টাকা ভরতুকি দিতে হয়। হয়ত সেজন্যই সিনিয়ার সিটিজেনদের যে সব সুযোগ সুবিধা আগে দেওয়া হত তা আর এই সরকার দিতে চাইছে না।অন্যদিকে রেলমন্ত্রক দেখাচ্ছে বিগত পাঁচ বছরে তারা এই সুবিধা না দিয়ে ৮৯১৩ কোটি টাকা ঘরে তুলেছে। তাহলে কি এটা ভাবলে ভুল হবে, এই যে এত হই চই করে যে বন্দে ভারত চালু করা হল, তার থেকে আর্থিকভাবে বলার মত তেমন কিছু এখনও হয়নি। একদিকে যেমন এই ট্রেন হয়েছে “প্রচারের” এক বড় স্থান আর অন্য দিকে কম টাকার টিকেটে একই গন্তব্যে যাওয়া অন্য ট্রেনের যাত্রীদের চিন্তার কারণ।