
ওঙ্কার ডেস্ক : চিল্কা হ্রদ ও দেশের জল সম্পদ রক্ষা, জল দূষন, জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়, অতিরিক্ত মাছ আরহণ, খাদ্য নিরাপত্তা, মানুষের জীবিকা বিষয়ে ১১ জুন ব্যারাকপুরে বিশেষ বৈঠক করেন বিশেষজ্ঞদের এক দল। বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও বিশ্ব মহাসাগর দিবস উপলক্ষে আইসিএআর-সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট, চিলিকা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি এবং সাসটেইনেবল সিফুড নেটওয়ার্ক অফ ইন্ডিয়া-র যৌথ উদ্যোগে বারাকপুরে আলোচনাসভা আয়োজিত হয়। এই আলোচনা সভার বিষয় ছিল “স্বাস্থ্যসম্মত জলজ বাস্তুব্যবস্থা ও চিল্কা হ্রদের সুস্থায়ীত্ব নিশ্চিত করা”।

ওই আলোচনায় চিল্কা হ্রদে ইলিশ মাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে কর্মশালায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। মৎস্যসম্পদের সুস্থায়ী ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই হ্রদে ইলিশ মাছের সংখ্যা কমে যাওয়া নিয়ে আয়োজিত সভায় বৈজ্ঞানিক ও নীতিনির্ভর নানা সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। আলোচনায় বিশেষভাবে মৎস্যসম্পদের সুস্থায়ী পুনরুদ্ধার ও ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। আয়োজিত কর্মশালায় মেরিন স্টুয়ার্ডশিপ কাউন্সিলের সার্টিফিকেশন প্রোগ্রামের কথা উল্লেখ করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় মৎস্যচাষ ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এমনটাই আশা রাখা যাচ্ছে।
চিল্কা হ্রদের কাদামাটির কাঁকড়া চাষ নিয়েও আলোচনায় গুরুত্ব দেওয়া হয়। বহু স্থানীয় পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস এই মৎস্যচর্চা। নতুন গবেষণা এবং বাস্তব পরিস্থিতি বিশ্লেষণের ভিত্তিতে জলজ জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও স্থানীয়দের জীবিকা উন্নয়নের কথাও উঠে আসে এই আলোচনায়।
উল্লেখ্য সভায় উপস্থিত ছিলেন আইসিএআর-সিআইএফআরআই -এর পরিচালক ডঃ বি. কে. দাস, মেরিন স্টুয়ার্ডশিপ কাউন্সিলের প্রধান ডঃ রঞ্জিত সুশীলন, ডঃ সুনীল মহম্মদ সহ আরও অনেক অভিজ্ঞ ব্যাক্তিবর্গ।

এদিন বৈঠকে ডঃ বি. কে. দাস বলেন, “চিল্কা হ্রদের বাস্তুতন্ত্র রক্ষা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবিকা সুরক্ষার জন্য সুস্থায়ী মৎস্য পরিচালনা অত্যন্ত জরুরি”। তিনি এই প্রেক্ষাপটে সার্টিফিকেশনের কথাও বলেন। ডঃ সুনীল মহম্মদের মতে এই সংশাপত্র ভবিষতে অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভজনক হবে। তিনি জানান, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাছের মজুত জমা রেখে, পরিবেশগত ক্ষতি কমিয়ে এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করলে চিল্কা হ্রদের মাছ চাষকে উন্নত করে আন্তর্জাতিক বাজারে পাঠানো যাবে।
ডঃ রঞ্জিত সুশীলন মন্তব্য করেন, “বিজ্ঞানসম্মত ও সুস্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য এবং জীবিকার সুরক্ষা সম্ভব”। তাঁর মতে, জলবায়ু বদল আর দূষণের সমস্যার জন্য এই কর্মশালায় যেসব কথা উঠেছে, তা ভবিষ্যতে অনেক কাজে লাগবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে মাছ ধরা, প্রকৃতিকে ক্ষতি না করে মৎস্যচাষ করা আর মানুষকে এই বিষয়ে সচেতন করাই আগামী দিনে মৎস্যচাষ আর চাষিদের উন্নয়নের বড় ভরসা হতে পারে।