
নিজস্ব সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি : উত্তরবঙ্গে মোটের উপর বিজেপির শক্তঘাঁটি উত্তরবঙ্গে মমতার নিশানা যে ২৬-এর নির্বাচন, সোমবার শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ বনিক সম্মেলনে তার স্পষ্ট ইংগিত পাওয়া গেল। এদিন শিলিগুড়ির দীনবন্ধু মঞ্চে তিনি বৈঠক করলেন উত্তরবঙ্গের শিল্পোদ্যোগীদের সঙ্গে।মন দিয়ে শুনলেন প্রত্যেক জেলার ব্যবসায়ীদের অভাব-অভিযোগ। মঞ্চ থেকেই কিছু সমাধান বাতলে দিলেন, উদ্বোধন করলেন একাধিক প্রকল্পের। একই সঙ্গে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের জন্য বেশ বড় অঙ্কের বিনিয়োগেরও ঘোষণা করলেন। X-এ মমতা লিখেছেন, “বিজিবিএস ২০২৫ এর অসাধারণ সাফল্যের পর, আমি আজ নর্থ বেঙ্গল বিজনেস মিট ২০২৫ এ অংশগ্রহণ করতে পেরে আনন্দিত”।
উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক চিত্রটি তাঁর বিলক্ষণ জানা। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল উত্তরবঙ্গে যে ঘা খেয়েছিল, তা পুনোরুদ্ধারের চেষ্টা তিনি লাগাতার করে চলেছেন। ২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের পর দিনহাটা বিধানসভা আসন থেকে বিজেপির নিশীথ প্রামাণিক পদত্যাগ করায় যে উপনির্বাচন হয়, তাতে রেকর্ড ব্যবধানে তৃণমূলের উদয়ন গুহ জিতেছিলেন। পরে রায়গঞ্জ, ধূপগুড়ি এবং মাদারিহাট বিধানসভার উপনির্বাচনেও জেতে তৃণমূল। ফলে এই মুহূর্তে উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের বিধায়ক সংখ্যা বিজেপির চেয়ে বেশি। তা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে ২৬-এর নির্বাচনে উত্তরবঙ্গকে তিনি যে আরও কাছে চাইছেন সে কথা এদিন বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা।

উত্তরবঙ্গে পরিকাঠামোর উন্নয়নে অনেক আগে থেকেই হাত দিয়েছিলেন তিনি। সোমবার শিল্প বৈঠকের মঞ্চ থেকেই তিনি কয়েকটি প্রকল্পের ভার্চুয়াল উদ্বোধন সেরে নিলেন। তার মধ্যে রয়েছে জলপাইগুড়ির জল্পেশ মন্দিরের প্রবেশপথে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্কাইওয়াক, শিলিগুড়িতে বেসরকারি আবাসিক স্কুল, পশ্চিমবঙ্গ ক্ষুদ্রশিল্প উন্নয়ন নিগমের উদ্যোগে জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে তৈরি হওয়া চারটি শিল্প উদ্যান। এ ছাড়াও উদ্বোধন করেন শিলিগুড়ির ওয়েবেল আইটি পার্কে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে তৈরি হওয়া তথ্যপ্রযুক্তি ক্লাস্টারের। এছাড়ও তিনি এদিন ঘোষণা করেন, মঙ্গলবার থেকে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, রায়গঞ্জ, মালদহ-সহ উত্তরবঙ্গের ছয় শহর থেকে দিঘা যাওয়ার জন্য বাতানুকূল বাস পরিষেবা চালু হচ্ছে।
এখানেই থেমে থাকেননি মমতা, কার্যত ২৬-এর কথা মাথায় রেখে একগুচ্ছ পরিকল্পনা ঘোষণা করলেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, কোচবিহারে শিল্প উদ্যান গড়বে সরকার। কলকাতার নিউটাউনে আন্তর্জাতিক মানের কনভেনশন সেন্টারের আদলে এ বার তেমন একটি সেন্টার শিলিগুড়িতেও তৈরি করতে চান মমতা। বৈঠকের মধ্যেই আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে সেই কনভেনশন সেন্টারের জন্য জমি চিহ্নিত করে ফেলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই কনভেনশন সেন্টারের জন্য উত্তরায়নের উল্টো দিকে ১০ একর জমি রাখা হচ্ছে, কাছেই অন্য একটি পাঁচ একর জায়গায় শিল্প উদ্যান বা অন্য কোনও ধরনের কর্মসংস্থান কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা করতেও প্রশাসনকে নির্দেশ দিলেন তিনি। বাগডোগরা বিমানবন্দরের উল্টো দিকে সরকারের হাতে থাকা চার একর জমিতে হোটেল তৈরির প্রস্তাব দেন মুখ্যমন্ত্রী।
সোমবার শিল্প সম্মেলনের মঞ্চ থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার জেলার শিল্পোদ্যোগী ও ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিদের কাছ থেকে বেশ কিছু অভিযোগ পান। তার মধ্যে বেশ কয়েকটির সমাধানের জন্য সঙ্গে সঙ্গেই আধিকারিকদের নির্দেশ দিলেন। যার মধ্যে রয়েছে মূলত ট্রেড লাইসেন্স ও মিউটেশনের জন্য অতিরিক্ত খরচ। এমন অভিযোগ শুনে অবাক হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ ব্যাপারে তাঁর ক্ষোভ চাপা থাকেনি। তিনি বলেন, ‘‘আমি তো বাড়াতে বলিনি। আমি সব সময় কর বাড়ানোর বিরুদ্ধে। পারলে আমি কর মকুব করে দিই। জলের করও আমরা নিই না। এখানে বাড়ানো হয়েছে কেন?’’ এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন মুখ্যসচিবকে। অবিলম্বে ওই বর্ধিত মাশুল কমানোর নির্দেশ দেন তিনি।
চা শিল্পকে চাঙ্গা করতেও রাজ্য সরকারের তরফ থেকে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন মমতা। এক নামী চা উৎপাদক সংস্থার কর্ণধারের প্রস্তাব পছন্দ হওয়ায় তিনি দ্রুত সব বাগান মালিককে ওই বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে বলেন। তিনি এদিনের শিল্প সম্মেলন নিয়ে X-এ লিখেছেন, “উত্তরপূর্বের প্রবেশদ্বার হিসাবে, বাণিজ্য ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গ অত্যন্ত কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে। একসাথে, আমরা এর অব্যবহৃত সম্ভাব্যতা সম্পূর্ণরূপে ব্যবহারের অর্থপূর্ণ উপায় অনুসন্ধান করেছি”।
শিলিগুড়িতে শিল্প সম্মেলনের পর, তিনি আরও দু দিন থাকছেন উত্তরবঙ্গে। মঙ্গলবার জলপাইগুড়িতে সরকারি পরিষেবা প্রদানের একটি কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকছেন, এরপর বুধবার শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গের আট জেলাকে নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক। বৃহস্পতিবার কলকাতায় ফিরছেন মুখ্যমন্ত্রী।