
নিজস্ব সংবাদদাতা : বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কার্যত ২৬শের ডঙ্কা বাজিয়ে দিলেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে মূল নিশানা ছিল তৃণমূল সরকার। রাজ্য সরকারকে নিশানা করে তিনি একের পর এক আক্রমণ শানিয়েছেন। তার জবাব দিতে চটজলদি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনের ডাক দেন।
মমতা বলেন, ‘‘ এত বড় নেতা আপনি, আমেরিকা বললেই চুপ হয়ে যান!’’ মোদীকে খোলা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মমতা বলেন, “আজ বাংলা নিরাপদ বলে আপনি ঠিক নির্বাচনের আগে এখানে আসেন। আসেন বাংলার মানুষকে ভুল বোঝাতে, কুৎসা রটাতে, ষড়যন্ত্র করতে। মনিপুরে গেলেন না কেন ? আপনার তো আগে ওখানে যাওয়া উচিত ছিল।’’ “অপারেশন সিঁদুর”কে টেনে এনে মমতা বলেন, ‘‘ওই অভিযানের নাম ‘অপারেশন সিঁদুর’ ওঁরা দিয়েছেন। এই নাম দেওয়া হয়েছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে। যে সময় বিরোধিরাও দেশের হয়ে গলা ফাটাচ্ছেন, সেই সময় নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসাবে এখানে রাজনীতির হোলি খেলতে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী ?’’ তিনি বলেন, ‘‘বাংলা আপনার কাছে এক লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা পায়। আগে সেই টাকা দিন, তার পর কথা বলুন।’’
এইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সিকিম না যাওয়া নিয়ে ঠুকলেন। বললেন, ‘‘ সেনাকে স্যালুট করতে আসবেন ভেবেছিলাম। সিকিমে তো গেলেনই না। ভয় পান নাকি ? বিদেশে তো এত ঘুরতেন। প্রচার হওয়া উচিত সেনার। এখনও জঙ্গিদের গ্রেফতার করতে পারেননি কেন ?’’ মোদির আক্রমণের পালটা হিসেবে মমতা তোপ দাগলেন বিজেপি শাসিত রাজ্যের দিকে। বললেন, ‘‘আগে নিজের দোষ দেখুন। আপনাদের দুর্নীতি অনেক বেশি। কোনও কিছুতে দুর্নীতি ধরা পড়লে সরকারকে পদক্ষেপ করতে হয়। কিন্তু যখন আপনার গুজরাতে, মধ্যপ্রদেশে পাকিস্তানের চরবৃত্তি করার জন্য কেউ ধরা পড়েন, তখন আপনারা কী করেন ?’’ নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করতে গিয়ে তিনি টেনে আনলেন মোদীর অতীতের কথা। বললেন, ‘‘উনি আগে নিজেকে চা-ওয়ালা বলতেন। পরে বললেন, পাহারাদার! আর এখন সিঁদুর বেচতে এসেছেন ?’’ মোদীর এদিনের জনসভা নিয়ে কথা বলেন মমতা। মমতা বলেন, ‘‘উনি বিভাজনের রাজনীতি করছেন। কেন আজ ওঁকে অসম থেকে লোক নিয়ে আসতে হল ? তার মানে, উত্তরবঙ্গের মানুষ ওঁকে চিনে গিয়েছেন। ওঁর উপর আর মানুষের বিশ্বাস নেই।’’
আলিপুর দুয়ারের জনসভায় মদীর গলায় রাজ্যের যে পাঁচটি ‘সঙ্কট’ উঠে এসেছে তাড় পাল্টা জবাব দেন তিনি। এসএসসি দুর্নীতিতে ২৬ হাজার চাকরি বাতিল প্রসঙ্গে মোদী জনসভায় দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘‘তৃণমূলের নেতাদের দুর্নীতির জন্য এখানকার বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এঁরা নিজেদের ভুল মানতেই চাইছেন না। উল্টে আদালতকে আক্রমণ করছেন এঁরা। তৃণমূল সরকার অভিযুক্তদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে। বিজেপি তা হতে দেবে না।’’ মোদি টেনে আনেন মুর্শিদাবাদের প্রসঙ্গও। তিনি বলেছেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ-মালদহে যা হয়েছে, তা বর্তমান সরকারের নির্মমতার উদাহরণ। এখানকার সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত। প্রতি বার আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। এ ভাবে কি কোনও সরকার চলতে পারে ?’’ রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারও তাঁর বক্তব্যে টেনে আনেন মুর্শিদাবাদ প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ‘‘পহেলগাঁওয়ের ঘটনার সঙ্গে মুর্শিদাবাদের ঘটনার মিল রয়েছে। এই সরকারকে আমাদের উৎখাত করতেই হবে। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বেই তা হবে।’’